মাছিবংশেতে এল অদ্ভুত জ্ঞানী সে আজন্ম ধ্যানী সে। সাধনের মন্ত্র তাহার ভন্ভন্-ভন্ভন্কার। সংসারে দুই পাখা নিয়ে দুই পক্ষ-- দক্ষিণ-বাম আর ভক্ষ্য-অভক্ষ্য-- কাঁপাতে কাঁপাতে পাখা সূক্ষ্ম অদৃশ্য দ্বৈতবিহীন হয় বিশ্ব। সুগন্ধ পচা-গন্ধের ভালো মন্দের ঘুচে যায় ভেদবোধ-বন্ধন; এক হয় পঙ্ক ও চন্দন। অঘোরপন্থ সে যে শবাসন-সাধনায় ইঁদুর কুকুর হোক কিছুতেই বাধা নাই-- বসে রয় স্তব্ধ, মৌনী সে একমনা নাহি করে শব্দ। ইড়া পিঙ্গলা বেয়ে অদৃশ্য দীপ্তি ব্রহ্মরন্ধে# বহি তৃপ্তি। লোপ পেয়ে যায় তার আছিত্ব, ভুলে যায় মাছিত্ব। মন তার বিজ্ঞাননিষ্ঠ; মানুষের বক্ষ বা পৃষ্ঠ কিংবা তাহার নাসিকান্ত তাই নিয়ে গবেষণা চলে অক্লান্ত-- বার বার তাড়া খায়, গাল খায়, তবুও হার না মানিতে চায় কভু ও। পৃথক করে না কভু ইষ্ট অনিষ্ট, জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠ; সমবুদ্ধিতে দেখে শ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট। সংকোচহীন তার বিজ্ঞানী ধাত; পক্ষে বহন করে অপক্ষপাত। এদের ভাষায় "ছি ছি', শৌখিন রুচি নিয়ে খুতখুত নেই মিছিমিছি। অকারণ সন্ধানে মন তার গিয়াছে; কেবলই ঘুরিয়া দেখে কোথায় যে কী আছে। বিশ্রামী বলদের পিঠে করে মনোযোগ রসের রহস্যের যদি পায় কোনো যোগ, ল্যাজের ঝাপট লাগে পলকেই পলকেই, বাধাহীন সাধনার ফল পায় বলো কে-ই! চারি দিকে মানবের বিষম অহংকার, তারই মাঝে থেকে মনে লেশ নেই শঙ্কার। আকাশবিহারী তার গতিনৈপুণ্যেই সকল চপেটাঘাত উড়ে যায় শূন্যেই। এই তার বিজ্ঞানী কৌশল, স্পর্শ করে না তারে শত্রুর মৌশল। মানুষের মারণের লক্ষ্য ক্ষিপ্র এড়ায়ে যায় নির্ভয়পক্ষ। নাই লাজ, নাই ঘৃণা, নাই ভয়-- কর্দমে নর্দমা-বিহারীর জয়। ভন্-ভন্-ভন্কার আকাশেতে ওঠে তার ধ্বনি জয়ডঙ্কার। মানবশিশুরে বলি, দেখো দৃষ্টান্ত-- বার বার তাড়া খেয়ো, নাহি হোয়ো ক্ষান্ত। অদৃষ্ট মার দেয় অলক্ষ্যে পশ্চাৎ কখন অকস্মাৎ-- তবু মনে রেখো নির্বন্ধ, সুযোগের পেলে নামগন্ধ চ'ড়ে ব'সো অপরের নিরুপায় পৃষ্ঠ, ক'রো তারে বিষম অতিষ্ঠ। সার্থক হতে চাও জীবনে, কী শহরে, কী বনে, পাঠ লহ প্রয়োজনসিদ্ধের বিরক্ত করবার অদম্য বিদ্যের-- নিত্য কানের কাছে ভন্ভন্ ভন্ভন্ লুব্ধের অপ্রতিহত অবলম্বন।