এদের পানে তাকাই আমি, বক্ষে কাঁপে ভয়। সব পেরিয়ে তোমায় দেখি, আর তো কিছু নয়। একটুখানি সামনে আমার আঁধার জেগে থাকে সেইটুকুতে সূর্যতারা সবই আমার ঢাকে-- তার উপরে চেয়ে দেখি আলোয় আলোময়। ছোটো আমার বড়ো হয় যে যখন টানি কাছে-- বড়ো তখন কেমন করে লুকায় তারি পাছে। কাছের পানে তাকিয়ে আমার দিন তো গেছে কেটে, এবার যেন সন্ধ্যাবেলায় কাছের ক্ষুধা মেটে-- এতকাল যে রইলে দূরে তোমারি হোক জয়।
আমি যদি দুষ্টুমি ক'রে চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি, ভোরের বেলা মা গো, ডালের 'পরে কচি পাতায় করি লুটোপুটি, তবে তুমি আমার কাছে হারো, তখন কি মা চিনতে আমায় পারো। তুমি ডাক, "খোকা কোথায় ওরে।' আমি শুধু হাসি চুপটি করে। যখন তুমি থাকবে যে কাজ নিয়ে সবই আমি দেখব নয়ন মেলে। স্নানটি করে চাঁপার তলা দিয়ে আসবে তুমি পিঠেতে চুল ফেলে; এখান দিয়ে পুজোর ঘরে যাবে, দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে -- তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে। দুপুর বেলা মহাভারত-হাতে বসবে তুমি সবার খাওয়া হলে, গাছের ছায়া ঘরের জানালাতে পড়বে এসে তোমার পিঠে কোলে, আমি আমার ছোট্ট ছায়াখানি দোলাব তোর বইয়ের 'পরে আনি -- তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে তোমার চোখে খোকার ছায়া ভাসে। সন্ধেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে যখন তুমি যাবে গোয়ালঘরে তখন আমি ফুলের খেলা খেলে টুপ্ করে মা, পড়ব ভুঁয়ে ঝরে। আবার আমি তোমার খোকা হব, "গল্প বলো' তোমায় গিয়ে কব। তুমি বলবে, "দুষ্টু, ছিলি কোথা।' আমি বলব, "বলব না সে কথা।'
সে পরম পরিপূর্ণ প্রভাতের লাগি, হে ভারত, সর্বদুঃখে রহো তুমি জাগি সরলনির্মলচিত্ত-- সকল বন্ধনে আত্মারে স্বাধীন রাখি, পুষ্প ও চন্দনে আপনার অন্তরের মাহাত্ম্যমন্দির সজ্জিত সুগন্ধি করি, দুঃখনম্রশির তাঁর পদতলে নিত্য রাখিয়া নীরবে। তাঁ' হতে বঞ্চিত করে তোমারে এ ভবে এমন কেহই নাই-- সেই গর্বভরে সর্বভয়ে থাকো তুমি নির্ভয় অন্তরে তাঁর হস্ত হতে লয়ে অক্ষয় সম্মান। ধরায় হোক-না তব যত নিম্ন স্থান তাঁর পাদপীঠ করো সে আসন তব যাঁর পাদরেণুকণা এ নিখিল ভব।