আজ কি তপন তুমি যাবে অস্তাচলে না শুনে আমার মুখে একটিও গান। দাঁড়াও গো, বিদায়ের দুটি কথা বলে আজিকার দিন আমি করি অবসান। থামো ওই সমুদ্রের প্রান্তরেখা-'পরে, মুখে মোর রাখো তব একমাত্র আঁখি। দিবসের শেষ পলে নিমেষের তরে তুমি চেয়ে থাকো আর আমি চেয়ে থাকি। দুজনের আঁখি-'পরে সায়াহ্ন-আঁধার আঁখির পাতার মতো আসুক মুদিয়া, গভীর তিমিরস্নিগ্ধ শান্তির পাথার নিবায়ে ফেলুক আজি দুটি দীপ্ত হিয়া। শেষ গান সাঙ্গ করে থেমে গেছে পাখি, আমার এ গানখানি ছিল শুধু বাকি॥
এই লেখনগুলি সুরু হয়েছিল চীনে জাপানে। পাখায় কাগজে রুমালে কিছু লিখে দেবার জন্যে লোকের অনুরোধে এর উৎপত্তি। তারপরে স্বদেশে ও অন্য দেশেও তাগিদ পেয়েছি। এমনি ক'রে এই টুকরো লেখাগুলি জমে উঠ্ল। এর প্রধান মূল্য হাতের অক্ষরে ব্যক্তিগত পরিচয়ের । সে পরিচয় কেবল অক্ষরে কেন, দ্রুতলিখিত ভাবের মধ্যেও ধরা পড়ে। ছাপার অক্ষরে সেই ব্যক্তিগত সংস্রবটি নষ্ট হয়-- সে অবস্থায় এই সব লেখা বাতি-নেবা চীন লণ্ঠনের মতো হাল্কা ও ব্যর্থ হতে পারে। তাই জর্ম্মনিতে হাতের অক্ষর ছাপবার উপায় আছে খবর পেয়ে লেখনগুলি ছাপিয়ে নেওয়া গেল। অন্যমনস্কতায় কাটাকুটি ভুলচুক ঘটেছে। সে সব ত্রুটিতেও ব্যক্তিগত পরিচয়েরই আভাস রয়ে গেল॥ শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর