জিরাফের বাবা বলে,-- 'খোকা তোর দেহ দেখে দেখে মনে মোর ক'মে যায় স্নেহ। সামনে বিষম উঁচু, পিছনেতে খাটো, এমন দেহটা নিয়ে কী করে যে হাঁটো।' খোকা বলে, 'আপনার পানে তুমি চেহো, মা যে কেন ভালোবাসে বোঝে না তা কেহ।'
আকাশ-ভরা তারার মাঝে আমার তারা কই। ওই হবে কি ওই। রাঙা আভার আভাস-মাঝে, সন্ধ্যারবির রাগে সিন্ধুপারের ঢেউয়ের ছিটে ওই যাহারে লাগে, ওই যে লাজুক আলোখানি, ওই যে গো নামহারা, ওই কি আমার হবে আপন তারা। জোয়ার ভাঁটার স্রোতের টানে আমার বেলা কাটে কেবল ঘাটে ঘাটে। এমনি করে পথে পথে অনেক হল খোঁজা, এমনি করে হাটে হাটে জমল অনেক বোঝা -- ইমনে আজ বাঁশি বাজে, মন যে কেমন করে আকাশে মোর আপন তারায় ভরে। দূরে এসে তার ভাষা কি ভুলেছি কোন্ খনে? পড়বে না কি মনে? ঘরে ফেরার প্রদীপ আমার রাখল কোথায় জ্বেলে পথে-চাওয়া করুণ চোখের কিরণখানি মেলে। কোন্ রাতে যে মেটাবে মোর তপ্ত দিনের তৃষা, খুঁজে খুঁজে পাব না তার দিশা? ক্ষণে ক্ষণে কাজের মাঝে দেয় নি কি দ্বার নাড়া-- পাই নি কি তার সাড়া। বাতায়নের মুক্তপথে স্বচ্ছ শরৎ-রাতে তার আলোটি মেশে নি কি মোর স্বপনের সাথে। হঠাৎ তারি সুরখানি কি ফাগুন-হাওয়া বেয়ে আসে নি মোর গানের 'পরে ধেয়ে। কানে কানে কথাটি তার অনেক সুখে দুখে বেজেছে মোর বুকে। মাঝে মাঝে তারি বাতাস আমার পালে এসে নিয়ে গেছে হঠাৎ আমায় আন্মনাদের দেশে-- পথ-হারানো বনের ছায়ায় কোন্ মায়াতে ভুলে গেঁথেছি হার নাম-না-জানা ফুলে। আমার তারার মন্ত্র নিয়ে এলেম ধরাতলে লক্ষ্যহারার দলে। বাসায় এল পথের হাওয়া, কাজের মাঝে খেলা, ভাসল ভিড়ের মুখর স্রোতে একলা প্রাণের ভেলা, বিচ্ছেদেরই লাগল বাদল মিলন-ঘন রাতে বাঁধনহারা শ্রাবণ-ধারাপাতে। ফিরে যাবার সময় হল তাই তো চেয়ে রই-- আমার তারা কই? গভীর রাতে প্রদীপগুলি নিবেছে এই পারে, বাসাহারা গন্ধ বেড়ায় বনের অন্ধকারে, সুর ঘুমালো নীরব নীড়ে, গান হল মোর সারা-- কোন্ আকাশে আমার আপন তারা।