সংসারে মোরে রাখিয়াছ যেই ঘরে সেই ঘরে রব সকল দুঃখ ভুলিয়া। করুণা করিয়া নিশিদিন নিজ করে রেখে দিয়ো তার একটি দুয়ার খুলিয়া। মোর সব কাজে মোর সব অবসরে সে দুয়ার রবে তোমারি প্রবেশ-তরে, সেথা হতে বায়ু বহিবে হৃদয়-'পরে চরণ হতে তব পদরজ তুলিয়া। সে দুয়ার খুলি আসিবে তুমি এ ঘরে, আমি বাহিরিব সে দুয়ারখানি খুলিয়া। আর যত সুখ পাই বা না পাই, তবু এক সুখ শুধু মোর তরে তুমি রাখিয়ো। সে সুখ কেবল তোমার আমার প্রভু, সে সুখের 'পরে তুমি জাগ্রত থাকিয়ো। তাহারে না ঢাকে আর যত সুখগুলি, সংসার যেন তাহাতে না দেয় ধূলি, সব কোলাহল হতে তারে তুমি তুলি যতন করিয়া আপন অঙ্কে ঢাকিয়ো। আর যত সুখে ভরুক ভিক্ষাঝুলি, সেই এক সুখ মোর তরে তুমি রাখিয়ো। যত বিশ্বাস ভেঙে ভেঙে যায়, স্বামী, এক বিশ্বাস রহে যেন চিতে লাগিয়া। যে অনলতাপ যখনি সহিব আমি দেয় যেন তাহে তব নাম বুকে দাগিয়া। দুখ পশে যবে মর্মের মাঝখানে তোমার লিখন-স্বাক্ষর যেন আনে, রুক্ষ বচন যতই আঘাত হানে সকল আঘাতে তব সুর উঠে জাগিয়া। শত বিশ্বাস ভেঙে যদি যায় প্রাণে এক বিশ্বাসে রহে যেন মন লাগিয়া।
কী কথা বলিব বলে বাহিরে এলেম চলে, দাঁড়ালেম দুয়ারে তোমার-- ঊর্ধ্বমুখে উচ্চরবে বলিতে গেলেম যবে কথা নাহি আর। যে কথা বলিতে চাহে প্রাণ সে শুধু হইয়া উঠে গান। নিজে না বুঝিতে পারি, তোমারে বুঝাতে নারি, চেয়ে থাকি উৎসুক-নয়ান। তবে কিছু শুধায়ো না-- শুনে যাও আনমনা, যাহা বোঝ, যাহা নাই বোঝ। সন্ধ্যার আঁধার-পরে মুখে আর কণ্ঠস্বরে বাকিটুকু খোঁজো। কথায় কিছু না যায় বলা, গান সেও উন্মত্ত উতলা। তুমি যদি মোর সুরে নিজ কথা দাও পুরে গীতি মোর হবে না বিফলা।