হে বন্ধু, সবার চেয়ে চিনি তোমাকেই এ কথায় পূর্ণ সত্য নেই। চিনি আমি সংসারের শত-সহস্রেরে কাজের বা অকাজের ঘেরে নির্দিষ্ট সীমায় যারা স্পষ্ট হয়ে জাগে, প্রত্যহের ব্যবহারে লাগে, প্রাপ্য যাহা হাতে দেয় তাই, দান যাহা তাহা নাহি পাই। অনন্তের সমুদ্রমন্থনে গভীর রহস্য হতে তুমি এলে আমার জীবনে। উঠিয়াছ অতলের অস্পষ্টতাখানি আপনার চারি দিকে টানি। নীহারিকা রহে যথা কেন্দ্রে তার নক্ষত্রেরে ঘেরি, জ্যোতির্ময় বাষ্প-মাঝে দূরবিন্দু তারাটিরে হেরি। তোমা-মাঝে শিল্পী তার রেখে গেছে তর্জনীর মানা, সব নহে জানা। সৌন্দর্যের যে-পাহারা জাগিয়া রয়েছে অন্তঃপুরে সে আমারে নিত্য রাখে দূরে।
আমি হব না তাপস, হব না, হব না, যেমনি বলুন যিনি। আমি হব না তাপস নিশ্চয় যদি না মেলে তপস্বিনী। আমি করেছি কঠিন পণ যদি না মিলে বকুলবন, যদি মনের মতন মন না পাই জিনি, তবে হব না তাপস, হব না, যদি না পাই সে তপস্বিনী। আমি ত্যজিব না ঘর, হব না বাহির উদাসীন সন্ন্যাসী, যদি ঘরের বাহিরে না হাসে কেহই ভুবন-ভুলানো হাসি। যদি না উড়ে নীলাঞ্চল মধুর বাতাসে বিচঞ্চল, যদি না বাজে কাঁকন মল রিনিক-ঝিনি-- আমি হব না তাপস, হব না, যদি না পাই গো তপস্বিনী। আমি হব না তাপস, তোমার শপথ, যদি সে তপের বলে কোনো নূতন ভুবন না পারি গড়িতে নূতন হৃদয়-তলে। যদি জাগায়ে বীণার তার কারো টুটিয়া মরম-দ্বার, কোনো নূতন আঁখির ঠার না লই চিনি আমি হব না তাপস, হব না, হব না, না পেলে তপস্বিনী।