বিরাট মানবচিত্তে অকথিত বাণীপুঞ্জ অব্যক্ত আবেগে ফিরে কাল হতে কালে মহাশূন্যে নীহারিকাসম। সে আমার মনঃসীমানার সহসা আঘাতে ছিন্ন হয়ে আকারে হয়েছে ঘনীভূত, আবর্তন করিতেছে আমার রচনাকক্ষপথে।
মনে আছে কার দেওয়া সেই ফুল? সে ফুল যদি শুকিয়ে গিয়ে থাকে তবে তারে সাজিয়ে রাখাই ভুল -- মিথ্যে কেন কাঁদিয়ে রাখ তাকে। ধুলায় তারি শান্তি তারি গতি, এই সমাদর কোরো তাহার প্রতি -- সময় যখন গেছে তখন তারে ভুলো একেবারে। মাঘের শেষে নাগকেশরের ফুলে আকাশে বয় মন-হারানো হাওয়া; বনের বক্ষ উঠেছে আজ দুলে, চামেলি ওই কার যেন পথ-চাওয়া। ছায়ায় ছায়ায় কাদের কানাকানি, চোখে-চোখে নীরব জানাজানি -- এ উৎসবে শুকনো ফুলের লাজ ঘুচিয়ে দিয়ো আজ। যদি-বা তার ফুরিয়ে থাকে বেলা, মনে জেনো দুঃখ তাহে নাই; করেছিল ক্ষণকালের খেলা, পেয়েছিল ক্ষণকালের ঠাঁই। অলকে সে কানের কাছে দুলি বলেছিল নীরব কথাগুলি, গন্ধ তাহার ফিরেছে পথ ভুলে তোমার এলোচুলে। সেই মাধুরী আজ কি হবে ফাঁকি। লুকিয়ে সে কি রয় নি কোনোখানে। কাহিনী তার থাকবে না আর বাকি কোনো স্বপ্নে, কোনো গন্ধে গানে? আরেক দিনের বনচ্ছায়ায় লিখা ফিরবে না কি তাহার মরীচিকা। অশ্রুতে তার আভাস দিবে নাকি আরেক দিনের আঁখি। নাহয় তাও লুপ্ত যদিই হয়, তার লাগি শোক সেও তো সেই পথে। এ জগতে সদাই ঘটে ক্ষয়, ক্ষতি তবু হয় না কোনোমতে। শুকিয়ে-পড়া পুষ্পদলের ধূলি এ ধরণী যায় যদি বা ভুলি -- সেই ধুলারই বিস্মরণের কোলে নতুন কুসুম দোলে।
দুঃখ, তব যন্ত্রণায় যে দুর্দিনে চিত্ত উঠে ভরি দেহে মনে চতুর্দিকে তোমার প্রহরী রোধ করে বাহিরের সান্ত্বনার দ্বার, সেইক্ষণে প্রাণ আপনার নিগূঢ় ভাণ্ডার হতে গভীর সান্ত্বনা বাহির করিয়া আনে; অমৃতের কণা গলে আসে অশ্রুজলে; সে আনন্দ দেখা দেয় অন্তরের তলে যে আপন পরিপূর্ণতায় আপন করিয়া লয় দুঃখবেদনায়। তখন সে মহা-অন্ধকারে অনির্বাণ আলোকের পাই দেখা অন্তরমাঝারে। তখন বুঝিতে পারি আপনার মাঝে আপন অমরাবতী চিরদিন গোপনে বিরাজে।