যখন বীণায় মোর আনমনা সুরে গান বেঁধেছিনু বসি একা তখনো যে ছিলে তুমি দূরে, দাও নাই দেখা; কেমনে জানিব, সেই গান অপরিচয়ের তীরে তোমারেই করিছে সন্ধান। দেখিলাম, কাছে তুমি আসিলে যেমনি তোমারি গতির তালে বাজে মোর এ ছন্দের ধ্বনি; মনে হল, সুরের সে মিলে উচ্ছ্বসিল আনন্দের নিশ্বাস নিখিলে। বর্ষে বর্ষে পুষ্পবনে পুষ্পগুলি ফুটে আর ঝরে এ মিলের তরে। কবির সংগীতে বাণী অঞ্জলি পাতিয়া আছে জাগি অনাগত প্রসাদের লাগি। চলে লুকাচুরি খেলা বিশ্বে অনিবার অজানার সাথে অজানার।
ভিড় করেছে রঙমশালীর দলে। কেউ-বা জলে কেউ-বা তারা স্থলে। অজানা দেশ, রাত্রিদিনে পায়ের কাছের পথটি চিনে দুঃসাহসে এগিয়ে তারা চলে। কোন্ মহারাজ রথের 'পরে একা, ভালো করে যায় না তাঁরে দেখা। সূর্যতারা অন্ধকারে ডাইনে বাঁয়ে উঁকি মারে, আপন আলোয় দৃষ্টি তাদের ঠেকা। আমার মশাল সামনে ধরি না যে, তাই তো আলো চক্ষে নাহি বাজে। অন্তরে মোর রঙের শিখা চিত্তকে দেয় আপন টিকা, রঙিনকে তাই দেখি মনের মাঝে। পাখিরা রঙ ওড়ায় আকাশতলে, মাছেরা রঙ খেলায় গভীর জলে। রঙ জেগেছে বনসভায় গোলাপ চাঁপা রঙন জবায়, মেঘেরা রঙ ফোটায় পলে পলে।
নীরব ডাকে রঙমহালের রাজা হুকুম করেন, "রঙের আসর সাজা।'-- অমনি ফাগুন কোথা হতে ভেসে আসে হাওয়ার স্রোতে, পুরানোকে রাঙিয়ে করে তাজা। তাদের আসর বাহির-ভুবনেতে, ফেরে সেথায় রঙের নেশায় মেতে। আমার এ রঙ গোপন প্রাণে, আমার এ রঙ গভীর গানে, রঙের আসন ধেয়ানে দিই পেতে।
বাছা রে, তোর চক্ষে কেন জল। কে তোরে যে কী বলেছে আমায় খুলে বল্। লিখতে গিয়ে হাতে মুখে মেখেছ সব কালি,নোংরা ব'লে তাই দিয়েছে গালি? ছি ছি, উচিত এ কি। পূর্ণশশী মাখে মসী -- নোংরা বলুক দেখি। বাছা রে, তোর সবাই ধরে দোষ। আমি দেখি সকল-তাতে এদের অসন্তোষ। খেলতে গিয়ে কাপড়খানা ছিঁড়ে খুঁড়ে এলে তাই কি বলে লক্ষ্মীছাড়া ছেলে। ছি ছি, কেমন ধারা। ছেঁড়া মেঘে প্রভাত হাসে, সে কি লক্ষ্মীছাড়া। কান দিয়ো না তোমায় কে কী বলে। তোমার নামে অপবাদ যে ক্রমেই বেড়ে চলে। মিষ্টি তুমি ভালোবাস তাই কি ঘরে পরে লোভী বলে তোমার নিন্দে করে! ছি ছি, হবে কী। তোমায় যারা ভালোবাসে তারা তবে কী।