একদিন তরীখানা থেমেছিল এই ঘাটে লেগে, বসন্তের নূতন হাওয়ার বেগে। তোমরা শুধায়েছিলে মোরে ডাকি পরিচয় কোনো আছে নাকি, যাবে কোন্খানে। আমি শুধু বলেছি, কে জানে। নদীতে লাগিল দোলা, বাঁধনে পড়িল টান, একা বসে গাহিলাম যৌবনের বেদনার গান। সেই গান শুনি কুসুমিত তরুতলে তরুণতরুণী তুলিল অশোক, মোর হাতে দিয়ে তারা কহিল, "এ আমাদেরই লোক।' আর কিছু নয়, সে মোর প্রথম পরিচয়।
তার পরে জোয়ারের বেলা সাঙ্গ হল, সাঙ্গ হল তরঙ্গের খেলা; কোকিলের ক্লান্ত গানে বিস্মৃত দিনের কথা অকস্মাৎ যেন মনে আনে; কনকচাঁপার দল পড়ে ঝুরে, ভেসে যায় দূরে-- ফাল্গুনের উৎসবরাতির নিমন্ত্রণলিখন-পাঁতির ছিন্ন অংশ তারা অর্থহারা। ভাঁটার গভীর টানে তরীখানা ভেসে যায় সমুদ্রের পানে। নূতন কালের নব যাত্রী ছেলেমেয়ে শুধাইছে দূর হতে চেয়ে, "সন্ধ্যার তারার দিকে বহিয়া চলেছে তরণী কে।' সেতারেতে বাঁধিলাম তার, গাহিলাম আরবার-- মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক আর কিছু নয়, এই হোক শেষ পরিচয়।
সকাল বেলায় উঠেই দেখি চেয়ে, যাহা তাহা রয়েছে ঘর ছেয়ে-- খাতাপত্র কোথায় রাখি কী যে, হাতড়ে বেড়াই, খুঁজে না পাই নিজে। দামী যত কোথায় কী হয় জমা-- ছড়াছড়ি, নাই কোনো তার সেমিকোলন কমা। পড়ে আছে পত্রবিহীন লেফাফা সব ছিন্ন-- এই তো দেখি পুরুষ জাতের জাত-কুঁড়েমির চিহ্ন। পরক্ষণেই নামে কাজে মেয়ের হস্ত দুটি, মুহূর্তেকেই বিলুপ্ত হয় যেথায় যত ত্রুটি। দ্রুত হস্তে নিলজ্জ সব বিশৃঙ্খলার প্রতি নিয়ে আসে শোভনা তার চরম সদগতি। ছেঁড়ার ক্ষত আরোগ্য হয়, দাগীর লজ্জা ঢাকে, অদরকারীর গোপন বাসা কোথাও নাহি থাকে। অগোছালোর মধ্যে থাকি ভাবি অবাক-পারা-- সৃষ্টিতে এই পুরুষ মেয়ের চলেছে দুই ধারা; পুরুষ আপন চারি দিকে জমায় আবর্জনা, মেয়ে এসে নিত্য তারে করিছে মার্জনা।