দুয়ারে তোমার ভিড় ক'রে যারা আছে, ভিক্ষা তাদের চুকাইয়া দাও আগে। মোর নিবেদন নিভৃতে তোমার কাছে-- সেবক তোমার অধিক কিছু না মাগে। ভাঙিয়া এসেছি ভিক্ষাপাত্র, শুধু বীণাখানি রেখেছি মাত্র, বসি এক ধারে পথের কিনারে বাজাই সে বীণা দিবসরাত্র। দেখো কতজন মাগিছে রতনধূলি, কেহ আসিয়াছে যাচিতে নামের ঘটা-- ভরি নিতে চাহে কেহ বিদ্যার ঝুলি, কেহ ফিরে যাবে লয়ে বাক্যের ছটা। আমি আনিয়াছি এ বীণাযন্ত্র, তব কাছে লব গানের মন্ত্র, তুমি নিজ-হাতে বাঁধো এ বীণায় তোমার একটি স্বর্ণতন্ত্র। নগরের হাটে করিব না বেচাকেনা, লোকালয়ে আমি লাগিব না কোনো কাজে। পাব না কিছুই,রাখিব না কারো দেনা, অলস জীবন যাপিব গ্রামের মাঝে। তরুতলে বসি মন্দ-মন্দ ঝংকার দিব কত কী ছন্দ, যত গান গাব তব বাঁধা তারে বাজিবে তোমার উদার মন্দ্র।
আমায় যদি মনটি দেবে দিয়ো, দিয়ো মন-- মনের মধ্যে ভাবনা কিন্তু রেখো সারাক্ষণ। খোলা আমার দুয়ারখানা, ভোলা আমার প্রাণ-- কখন যে কার আনাগোনা নইকো সাবধান। পথের ধারে বাড়ি আমার, থাকি গানের ঝোঁকে-- বিদেশী সব পথিক এসে যেথা-সেথাই ঢোকে। ভাঙে কতক, হারায় কতক যা আছে মোর দামি-- এমনি ক'রে একে একে সর্বস্বান্ত আমি। আমায় যদি মনটি দেবে দিয়ো, দিয়ো মন-- মনের মধ্যে ভাবনা কিন্তু রেখো সারাক্ষণ। আমায় যদি মনটি দেবে নিষেধ তাহে নাই, কিছুর তরে আমায় কিন্তু কোরো না কেউ দায়ী। ভুলে যদি শপথ ক'রে বলি কিছু কবে, সেটা পালন না করি তো মাপ করিতেই হবে। ফাগুন মাসে পূর্ণিমাতে যে নিয়মটা চলে রাগ কোরো না চৈত্র মাসে সেটা ভন্গ হলে। কোনো দিন বা পূজার সাজি কুসুমে হয় ভরা, কোনো দিন বা শূন্য থাকে-- মিথ্যা সে দোষ ধরা। আমায় যদি মনটি দেবে নিষেধ তাহে নাই, কিছুর তরে আমায় কিন্তু কোরো না কেউ দায়ী। আমায় যদি মনটি দেবে রাখিয়া যাও তবে, দিয়েছ যে সেটা কিন্তু ভুলে থাকতে হবে। দুটি চক্ষে বাজবে তোমার নবরাগের বাঁশি, কণ্ঠে তোমার উচ্ছ্বসিয়া উঠবে হাসিরাশি। প্রশ্ন যদি শুধাও কভু মুখটি রাখি বুকে, মিথ্যা কোনো জবাব পেলে হেসো সকৌতুকে। যে দুয়ারটা বন্ধ থাকে বন্ধ থাকতে দিয়ো, আপনি যাহা এসে পড়ে তাহাই হেসে নিয়ো। আমায় যদি মনটি দেবে, রাখিয়া যাও তবে-- দিয়েছ যে সেটা কিন্তু ভুলে থাকতে হবে।