হৃদয় আমার প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে। বেদন-বাঁশি উঠল বেজে বাতাসে বাতাসে। এই যে আলোর আকুলতা আমারি এ আপন কথা, উদাস হয়ে প্রাণে আমার আবার ফিরে আসে। বাইরে তুমি নানা বেশে ফের নানান ছলে; জানি নে তো আমার মালা দিয়েছি কার গলে। আজ কী দেখি পরানমাঝে তোমার গলায় সব মালা যে, সব নিয়ে শেষ ধরা দিলে গভীর সর্বনাশে। সেই কথা আজ প্রকাশ হল অনন্ত আকাশে।
দুয়ারে তোমার ভিড় ক'রে যারা আছে, ভিক্ষা তাদের চুকাইয়া দাও আগে। মোর নিবেদন নিভৃতে তোমার কাছে-- সেবক তোমার অধিক কিছু না মাগে। ভাঙিয়া এসেছি ভিক্ষাপাত্র, শুধু বীণাখানি রেখেছি মাত্র, বসি এক ধারে পথের কিনারে বাজাই সে বীণা দিবসরাত্র। দেখো কতজন মাগিছে রতনধূলি, কেহ আসিয়াছে যাচিতে নামের ঘটা-- ভরি নিতে চাহে কেহ বিদ্যার ঝুলি, কেহ ফিরে যাবে লয়ে বাক্যের ছটা। আমি আনিয়াছি এ বীণাযন্ত্র, তব কাছে লব গানের মন্ত্র, তুমি নিজ-হাতে বাঁধো এ বীণায় তোমার একটি স্বর্ণতন্ত্র। নগরের হাটে করিব না বেচাকেনা, লোকালয়ে আমি লাগিব না কোনো কাজে। পাব না কিছুই,রাখিব না কারো দেনা, অলস জীবন যাপিব গ্রামের মাঝে। তরুতলে বসি মন্দ-মন্দ ঝংকার দিব কত কী ছন্দ, যত গান গাব তব বাঁধা তারে বাজিবে তোমার উদার মন্দ্র।
কোলাহল তো বারণ হল এবার কথা কানে কানে। এখন হবে প্রাণের আলাপ কেবলমাত্র গানে গানে। রাজার পথে লোক ছুটেছে, বেচাকেনার হাঁক উঠেছে, আমার ছুটি অবেলাতেই দিনদুপুরের মধ্যখানে, কাজের মাঝে ডাক পড়েছে কেন যে তা কেই বা জানে। মোর কাননে অকালে ফুল উঠুক তবে মুঞ্জরিয়া। মধ্যদিনে মৌমাছিরা বেড়াক মৃদু গুঞ্জরিয়া। মন্দ-ভালোর দ্বন্দ্বে খেটে গেছে তো দিন অনেক কেটে অলস-বেলার খেলার সাথি এবার আমার হৃদয় টানে। বিনা-কাজের ডাক পড়েছে কেন যে তা কেই বা জানে।