"ওগো পথিক দিনের শেষে যাত্রা তোমার সে কোন্ দেশে, এ পথ গেছে কোন্খানে?" "কে জানে ভাই, কে জানে। চন্দ্রসূর্য-গ্রহতারার আলোক দিয়ে প্রাচীর-ঘেরা আছে যে এক নিকুঞ্জবন নিভৃতে, চরাচরের হিয়ার কাছে তারি গোপন দুয়ার আছে সেইখানে ভাই, করব গমন নিশীথে।" "ওগো পথিক, দিনের শেষে চলেছ যে এমন বেশে কে আছে বা সেইখানে?" "কে জানে ভাই, কে জানে। বুকের কাছে প্রাণের সেতার গুঞ্জরি নাম কহে যে তার, শুনেছিলাম জোৎস্নারাতের স্বপনে। অপূর্ব তার চোখের চাওয়া, অপূর্ব তার গায়ের হাওয়া, অপূর্ব তার আসা-যাওয়া গোপনে।" "ওগো পথিক, দিনের শেষে চলেছ যে এমন হেসে, কিসের বিলাস সেইখানে?" "কে জানে ভাই, কে জানে। জগৎজোড়া সেই সে ঘরে কেবল দুটি মানুষ ধরে আর সেখানে ঠাঁই নাহি তো কিছুরি; সেথা মেঘের কোণে কোণে কেবলি দেখি ক্ষণে ক্ষণে একটি নাচে আনন্দময় বিজুরি।" "ওগো পথিক, দিনের শেষে চলেছ যে,কেই বা এসে, পথ দেখাবে সেইখানে?" "কে জানে গো, কে জানে। শুনেছি সেই একটি বাণী পথ দেখাবার মন্ত্রখানি, লেখা আছে সকল আকাশ-মাঝে গো; সে মন্ত্র এই প্রাণের পারে অনাহত বীণার তারে গভীর সুরে বাজে সকাল-সাঁঝে গো।"
চিরকাল রবে মোর প্রেমের কাঙাল, এ কথা বলিতে চাও বোলো। এই ক্ষণটুকু হোক সেই চিরকাল; তার পরে যদি তুমি ভোলো মনে করাব না আমি শপথ তোমার, আসা যাওয়া দুদিকেই খোলা রবে দ্বার, যাবার সময় হলে যেয়ো সহজেই, আবার আসিতে হয় এসো। সংশয় যদি রয় তাহে ক্ষতি নেই, তবু ভালোবাসো যদি বেসো। বন্ধু, তোমার পথ সম্মুখে জানি, পশ্চাতে আমি আছি বাঁধা। অশ্রুনয়নে বৃথা শিরে কর হানি যাত্রায় নাহি দিব বাধা। আমি তব জীবনের লক্ষ্য তো নহি, ভুলিতে ভুলিতে যাবে হে চিরবিরহী; তোমার যা দান তাহা রহিবে নবীন আমার স্মৃতির আঁখিজলে, আমার যা দান সেও জেনো চিরদিন রবে তব বিস্মৃতিতলে। দূরে চলে যেতে যেতে দ্বিধা করি মনে যদি কভু চেয়ে দেখ ফিরে হয়তো দেখিবে আমি শূন্য শয়নে নয়ন সিক্ত আঁখিনীরে। মার্জনা করো যদি পাব তবে বল, করুণা করিলে নাহি ঘোচে আঁখিজল, সত্য যা দিয়েছিলে থাক্ মোর তাই, দিবে লাজ তার বেশি দিলে। দুঃখ বাঁচাতে যদি কোনোমতে চাই দুঃখের মূল্য না মিলে। দুর্বল ম্লান করে নিজ অধিকার বরমাল্যের অপমানে। যে পারে সহজে নিতে যোগ্য সে তার, চেয়ে নিতে সে কভু না জানে। প্রেমেরে বাড়াতে গিয়ে মিশাব না ফাঁকি, সীমারে মানিয়া তার মর্যাদা রাখি, যা পেয়েছি সেই মোর অক্ষয় ধন, যা পাই নি বড়ো সেই নয়। চিত্ত ভরিয়া রবে ক্ষণিক মিলন চিরবিচ্ছেদ করি জয়।