দেহে মনে সুপ্তি যবে করে ভর সহসা চৈতন্যলোকে আনে কল্পান্তর, জাগ্রত জগৎ চলে যায় মিথ্যার কোঠায়। তখন নিদ্রার শূন্য ভরি স্বপ্নসৃষ্টি শুরু হয়, ধ্রুব সত্য তারে মনে করি। সেও ভেঙে যায় যবে পুনর্বার জেগে উঠি অন্য এক ভবে; তখনি তাহারে সত্য বলি, নিশ্চিত স্বপ্নের রূপ অনিশ্চিতে কোথা যায় চলি। তাই ভাবি মনে যদি এ জীবন মোর গাঁথা থাকে মায়ার স্বপনে, মৃত্যুর আঘাতে জেগে উঠে অজিকার এ জগৎ অকস্মাৎ যায় টুটে, সব-কিছু অন্য-এক অর্থে দেখি-- চিত্ত মোর চমকিয়া সত্য বলি তারে জানিবে কি? সহসা কি উদিবে স্মরণে ইহাই জাগ্রত সত্য অন্যকালে ছিল তার মনে?
তবু কি ছিল না তব সুখদুঃখ যত, আশা নৈরাশ্যের দ্বন্দ্ব আমাদেরি মতো, হে অমর কবি! ছিল না কি অনুক্ষণ রাজসভা-ষড়্চক্র, আঘাত গোপন? কখনো কি সহ নাই অপমানভার, অনাদর, অবিশ্বাস, অন্যায় বিচার, অভাব কঠোর ক্রূর--নিদ্রাহীন রাতি কখনো কি কাটে নাই বক্ষে শেল গাঁথি? তবু সে সবার ঊর্ধ্বে নির্লিপ্ত নির্মল ফুটিয়াছে কাব্য তব সৌন্দর্যকমল আনন্দের সূর্য-পানে; তার কোনো ঠাঁই দুঃখদৈন্যদুর্দিনের কোনো চিহ্ন নাই। জীবনমন্থনবিষ নিজে করি পান অমৃত যা উঠেছিল করে গেছ দান।