বড়োর দলে নাইবা হলে গণ্য-- লোভ কোরো না লোকখ্যাতির জন্য। ভালোবাসো, ভালো করো, প্রাণ মনে হও ভালো-- তবেই তুমি আলো পাবে, তবেই দেবে আলো-- আপন-মাঝে আপনি হবে ধন্য। স্বার্থমাঝে থেকো না অবরুদ্ধ-- লোভের সাথে নিয়ত করো যুদ্ধ। নিজেরে যদি বিশ্বমাঝে করিতে পারো দান নিজেরে তবে করিবে লাভ-- তখনি পাবে ত্রাণ, হৃদয়ে মনে তখনি হবে শুদ্ধ। নদীর জলে প্রবাহ হলে বন্ধ তাহার দশা তখনি জেনো মন্দ। দানের স্রোতে ছিল যে তার নিয়ত ত্রাণধারা-- হারায়ে ফেলি আপনা দিয়ে রচে আপন কারা, অশুচি হয়ে রহে সে নিরানন্দ।
যে কাল হরিয়া লয় ধন সেই কাল করিছে হরণ সে ধনের ক্ষতি। তাই বসুমতী নিত্য আছে বসুন্ধরা। একে একে পাখি যায়, গানের পসরা। কোথাও না হয় শূন্য, আঘাতের অন্ত নেই, তবুও অক্ষুণ্ন বিপুল সংসার। দুঃখ শুধু তোমার আমার নিমেষের বেড়া-ঘেরা এখানে ওখানে। সে বেড়া পারায়ে তাহা পৌঁছায় না নিখিলের পানে। ওরে তুমি, ওরে আমি, যেখানে তোদের যাত্রা একদিন যাবে থামি সেখানে দেখিতে পাবি ধন আর ক্ষতি তরঙ্গের ওঠা নামা,একই খেলা, একই তার গতি। কান্না আর হাসি এক বীণাতন্ত্রীতারে একই গান উঠিছে উচ্ছ্বাসি, একই শমে এসে মহামৌনে মিলে যায় শেষে। তোমার হৃদয়তাপ তোমার বিলাপ চাপা থাক্ আপনার ক্ষুদ্রতার তলে। যেইখানে লোকযাত্রা চলে সেখানে সবার সাথে নির্বিকার চলো একসারে, দেখা দাও শান্তিসৌম্য আপনারে -- যে-শান্তি মৃত্যুর প্রান্তে বৈরাগ্যে নিভৃত, আত্মসমাহিত; দিবসের যত ধূলিচিহ্ন, যত কিছু ক্ষত লুপ্ত হল যে শান্তির অন্তিম তিমিরে; সংসারের শেষ তীরে সপ্তর্ষির ধ্যানপুণ্য রাতে হারায় যে শান্তিসিন্ধু আপনারি অন্ত আপনাতে; যে শান্তি নিবিড় প্রেমে স্তব্ধ আছে থেমে, যে-প্রেম শরীরমন অতিক্রম করিয়া সুদূরে একান্ত মধুরে লভিয়াছে আপনার চরম বিস্মৃতি। সে পরম শান্তি-মাঝে হোক তব অচঞ্চল স্থিতি।