অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি। তখন ছিল দখিন হাওয়া আধ-ঘুমো আধ-জাগা, তখন ছিল সর্ষে-খেতে ফুলের আগুন লাগা, তখন আমি মালা গেঁথে পদ্মপাতায় ঢেকে পথে বাহির হয়েছিলেম রুদ্ধ কুটির থেকে। অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি। বসন্তের সে মালা আজ কি তেমন গন্ধ দেবে নবীন-সুধা-ঢালা? আজকে বহে পুবে বাতাস, মেঘে আকাশ জুড়ে-- ধানের খেতে ঢেউ উঠেছে নব-নবাঙ্কুরে। হাওয়ায় হাওয়ায় নাইকো রে হায় হালকা সে হিল্লোল, নাই বাগানে হাস্যে গানে পাগল গণ্ডগোল। অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি। হল কালের ভুল, পুবে হাওয়ায় ধরে দিলেম দখিন হাওয়ার ফুল। এখন এল অন্য সুরে অন্য গানের পালা, এখন গাঁথো অন্য ফুলে অন্য ছাঁদের মালা। বাজছে মেঘের গুরু গুরু, বাদল ঝরো ঝরো-- সজল বায়ে কদম্ববন কাঁপছে থরোথরো। অনেক হল দেরি, আজো তবু দীর্ঘ পথের অন্ত নাহি হেরি।
ফুলের মতন আপনি ফুটাও গান, হে আমার নাথ, এই তো তোমার দান। ওগো সে ফুল দেখিয়া আনন্দে আমি ভাসি, আমার বলিয়া উপহার দিতে আসি, তুমি নিজ হাতে তারে তুলে লও স্নেহে হাসি, দয়া করে প্রভু রাখো মোর অভিমান। তার পরে যদি পূজার বেলার শেষে এ গান ঝরিয়া ধরার ধুলায় মেশে, তবে ক্ষতি কিছু নাই-- তব করতলপুটে অজস্র ধন কত লুটে কত টুটে, তারা আমার জীবনে ক্ষণকালতরে ফুটে, চিরকালতরে সার্থক করে প্রাণ।