এ সংসারে আছে বহু অপরাধ, হেন অপবাদ যখন ঘোষণা কর উচ্চ হতে উষ্ণ উচ্চারণে, ভাবি মনে মনে, ক্রোধের উত্তাপ তার তোমার আপন অহংকার। মন্দ ও ভালোর দ্বন্দ্ব, কে না জানে চিরকাল আছে সৃষ্টির মর্মের কাছে। না যদি সে রহে বিশ্ব ঘেরি বিরুদ্ধ নির্ঘাতবেগে বাজে না শ্রেষ্ঠের জয়ভেরী। বিধাতার 'পরে মিথ্যা আনিয়ো না অভিযোগ মৃত্যুদুঃখ কর যবে ভোগ; মনে জেনো, মৃত্যুর মূল্যেই করি ক্রয় এ জীবনে দুর্মূল্য যা, অমর্ত যা, যা-কিছু অক্ষয়। ভাঙনের আক্রমণ সৃষ্টিকর্তা মানুষেরে আহ্বান করিছে অনুক্ষণ। দুর্গমের বক্ষে থাকে দয়াহীন শ্রেয়, রুদ্রতীর্থযাত্রীর পাথেয়। বহুভাগ্য সেই জন্মিয়াছি এমন বিশ্বেই নির্দোষ যা নয়। দুঃখ লজ্জা ভয় ছিন্ন সূত্রে জটিল গ্রন্থিতে রচনার সামঞ্জস্য পদে পদে রয়েছে খণ্ডিতে। এই ত্রুটি দেখেছি যখন শুনি নি কি সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী গভীর ক্রন্দন যুগে যুগে উচ্ছ্বসিতে থাকে; দেখি নি কি আর্তচিত্ত উদ্বোধিয়া রাখে মানুষের ইতিবৃত্ত বেদনার নিত্য আন্দোলনে? উৎপীড়িত সেই জাগরণে তন্দ্রাহীন যে-মহিমা যাত্রা করে রাত্রির আঁধারে নমস্কার জানাই তাহারে। নানা নামে আসিছে সে নানা অস্ত্র হাতে কন্টকিত অসম্মান অবাধে দলিয়া পদপাতে-- মরণেরে হানি-- প্রলয়ের পান্থ সেই, রক্ত মোর তাহারে আহ্বানি।
শ্লথপ্রাণ দুর্বলের স্পর্ধা আমি কভু সহিব না। লোলুপ সে লালায়িত, প্রেমেরে সে করে বিড়ম্বনা ক্লেদঘন চাটুবাক্যে, বাষ্পে বিজড়িত দৃষ্টি তার কলুষকুণ্ঠিত অঙ্গে লিপ্ত করে গ্লানি লালসার, আবেশে মন্থর কণ্ঠে গদ্গদ সে প্রার্থনা জানায় আলোকবঞ্চিত তার অন্তরের কানায় কানায় দুষ্ট ফেন উঠে বুদ্বুদিয়া-- ফেটে যায়, দেয় খুলি রুদ্ধ বিষবায়ু। গলিত মাংসের যেন ক্রিমিগুলি কল্পনাবিকার তার শিথিল চিন্তার তলে তলে আকুলিতে থাকে কিলিবিলি।-- যেন প্রাণপণ বলে মন তারে করে কষাঘাত! জীর্ণমজ্জা কাপুরুষে নারী যদি গ্রাহ্য করে, লজ্জিত দেবতা তারে দুষে অসহ্য সে অপমানে। নারী সে-যে মহেন্দ্রের দান, এসেছে ধরিত্রীতলে পুরুষেরে সঁপিতে সম্মান।