হায় রে তোরে রাখব ধরে, ভালোবাসা, মনে ছিল এই দুরাশা। পাথর দিয়ে ভিত্তি ফেঁদে বাসা যে তোর দিলেম বেঁধে, এল তুফান সর্বনাশা। মনে আমার ছিল যে রে ঘিরব তোরে হাসির ঘেরে-- চোখের জলে হল ভাসা। অনেক দুঃখে গেছে বোঝা বেঁধে রাখা নয় তো সোজা, সুখের ভিতে নহে তোমার অচল বাসা। এবার আমি সব-ফুরানো পথের শেষে বাঁধব বাসা মেঘের দেশে। ক্ষণে ক্ষণে নিত্যনব বদল কোরো মূর্তি তব রঙ-ফেরানো মায়ার বেশে। কখনো বা জ্যোৎস্না-ভরা কখনো বা বাদল-ঝরা খেয়াল তোমার কেঁদে হেসে। যেই হাওয়াতে হেলাভরে মিলিয়ে যাবে দিগন্তরে সেই হাওয়াতেই ফিরে ফিরে আসবে ভেসে। কঠিন মাটি বানের জলে যায় যে বয়ে, শৈলপাষাণ যায় তো ক্ষ'য়ে। কালের ঘায়ে সেই তো মরে অটল বলের গর্বভরে থাকতে যে চায় অচল হয়ে। জানে যারা চলার ধারা নিত্য থাকে নূতন তারা, হারায় যারা রয়ে রয়ে। ভালোবাসা, তোমারে তাই মরণ দিয়ে বরিতে চাই, চঞ্চলতার লীলা তোমার রইব সয়ে।
হোক খেলা, এ খেলায় যোগ দিতে হবে আনন্দকল্লোলাকুল নিখিলের সনে। সব ছেড়ে মৌনী হয়ে কোথা বসে রবে আপনার অন্তরের অন্ধকার কোণে! জেনো মনে শিশু তুমি এ বিপুল ভবে অনন্ত কালের কোলে, গগনপ্রাঙ্গণে-- যত জান মনে কর কিছুই জান না। বিনয়ে বিশ্বাসে প্রেমে হাতে লহ তুলি বর্ণগন্ধগীতময় যে মহা-খেলনা তোমারে দিয়াছে মাতা; হয় যদি ধূলি হোক ধূলি, এ ধূলির কোথায় তুলনা! থেকো না অকালবৃদ্ধ বসিয়া একেলা-- কেমনে মানুষ হবে না করিলে খেলা!
জানি নাই গো সাধন তোমার বলে কারে। আমি ধুলায় বসে খেলেছি এই তোমার দ্বারে। অবোধ আমি ছিলেম বলে যেমন খুশি এলেম চলে ভয় করি নি তোমায় আমি অন্ধকারে। তোমার জ্ঞানী আমায় বলে কঠিন তিরস্কারে "পথ দিয়ে তুই আসিস নি যে ফিরে যা রে।" ফেরার পন্থা বন্ধ ক'রে আপনি বাঁধো বাহুর ডোরে, ওরা আমায় মিথ্যা ডাকে বারে বারে।