আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন। তারি গলার মালা হতে পাপড়ি হেথায় লুটায় ছিন্ন। এল যখন সাড়াটি নাই, গেল চলে জানাল তাই, এমন করে আমারে হায় কে বা কাঁদায় সে জন ভিন্ন। তখন তরুণ ছিল অরুণ-আলো, পথটি ছিল কুসুমকীর্ণ। বসন্ত যে রঙীন বেশে ধরায় সেদিন অবতীর্ণ। সেদিন খবর মিলল না যে, রইনু বসে ঘরের মাঝে, আজকে পথে বাহির হব বহি আমার জীবন জীর্ণ।
বন্ধু, তুমি বন্ধুতার অজস্র অমৃতে পূর্ণপাত্র এনেছিলে মর্ত্য ধরণীতে। ছিল তব অবিরত হৃদয়ের সদাব্রত, বঞ্চিত কর নি কভু কারে তোমার উদার মুক্ত দ্বারে। মৈত্রী তব সমুচ্ছল ছিল গানে গানে অমরাবতীর সেই সুধাঝরা দানে। সুরে-ভরা সঙ্গ তব বারে বারে নব নব মাধুরীর আতিথ্য বিলাল, রসতৈলে জ্বেলেছিল আলো। দিন পরে গেছে দিন, মাস পরে মাস, তোমা হতে দূরে ছিল আমার আবাস। "হবে হবে, দেখা হবে' -- এ কথা নীরব রবে ধ্বনিত হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে অকথিত তব আমন্ত্রণে। আমারো যাবার কাল এল শেষে আজি, "হবে হবে, দেখা হবে' মনে ওঠে বাজি। সেখানেও হাসিমুখে বাহু মেলি লবে বুকে নবজ্যোতিদীপ্ত অনুরাগে, সেই ছবি মনে-মনে জাগে। এখানে গোপন চোর ধরার ধুলায় করে সে বিষম চুরি যখন ভুলায়। যদি ব্যথাহীন কাল বিনাশের ফেলে জাল, বিরহের স্মৃতি লয় হরি, সব চেয়ে সে ক্ষতিরে ডরি। তাই বলি, দীর্ঘ আয়ু দীর্ঘ অভিশাপ, বিচ্ছেদের তাপ নাশে সেই বড়ো তাপ। অনেক হারাতে হয়, তারেও করি নে ভয়; যতদিন ব্যথা রহে বাকি, তার বেশি যেন নাহি থাকি