ওরে আশা, কেন তোর হেন দীনবেশ! নিরাশারই মতো যেন বিষণ্ণ বদন কেন-- যেন অতি সংগোপনে যেন অতি সন্তর্পণে অতি ভয়ে ভয়ে প্রাণে করিস প্রবেশ। ফিরিবি কি প্রবেশিবি ভাবিয়া না পাস, কেন, আশা,কেন তোর কিসের তরাস। আজ আসিয়াছ দিতে যে সুখ-আশ্বাস, নিজে তাহা কর না বিশ্বাস, তাই হেন মৃদু গতি, তাই উঠিতেছে ধীরে দুখের নিশ্বাস। বসিয়া মরমস্থলে কহিছ চোখের জলে-- "বুঝি হেন দিন রহিবে না, আজ যাবে, আসিবে তো কাল, দুঃখ যাবে, ঘুচিবে যাতনা।" কেন, আশা, মোরে কেন হেন প্রতারণা। দুঃখক্লেশে আমি কি ডরাই, আমি কি তাদেব চিনি নাই। তারা সবে আমারি কি নয়। তবে, আশা, কেন এত ভয়। তবে কেন বসি মোর পাশ মোরে, আশা, দিতেছ আশ্বাস। বলো, আশা, বসি মোর চিতে, "আরো দুঃখ হইবে বহিতে, হৃদয়ের যে প্রদেশ হয়েছিল ভস্মশেষ আর যারে হত না সহিতে, আবার নূতন প্রাণ পেয়ে সেও পুন থাকিবে দহিতে। করিয়ো না ভয়, দুঃখ-জ্বালা আমারি কি নয়? তবে কেন হেন ম্লান মুখ তবে কেন হেন দীন বেশ? তবে কেন এত ভয়ে ভয়ে এ হৃদয়ে করিস প্রবেশ?
সকালে জাগিয়া উঠি ফুলদানে দেখিনু গোলাপ; প্রশ্ন এল মনে-- যুগ-যুগান্তের আবর্তনে সৌন্দর্যের পরিণামে যে শক্তি তোমারে আনিয়াছে অপূর্ণের কুৎসিতের প্রতি পদে পীড়ন এড়ায়ে, সে কি অন্ধ, সে কি অন্যমনা, সেও কি বৈরাগ্যব্রতী সন্ন্যাসীর মতো সুন্দরে ও অসুন্দরে ভেদ নাহি করে-- শুধু জ্ঞানক্রিয়া, শুধু বলক্রিয়া তার, বোধের নাইকো কোনো কাজ? কারা তর্ক করে বলে, সৃষ্টির সভায় সুশ্রী কুশ্রী বসে আছে সমান আসনে-- প্রহরীর কোনো বাধা নাই। আমি কবি তর্ক নাহি জানি, এ বিশ্বেরে দেখি তার সমগ্র স্বরূপে-- লক্ষকোটি গ্রহতারা আকাশে আকাশে বহন করিয়া চলে প্রকাণ্ড সুষমা, ছন্দ নাহি ভাঙে তার সুর নাহি বাধে, বিকৃতি না ঘটায় স্খলন; ঐ তো আকাশে দেখি স্তরে স্তরে পাপড়ি মেলিয়া জ্যোতির্ময় বিরাট গোলাপ।