ওগো আমার এই জীবনের শেষ পরিপূর্ণতা, মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা। সারা জনম তোমার লাগি প্রতিদিন যে আছি জাগি, তোমার তরে বহে বেড়াই দুঃখসুখের ব্যথা। মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা। যা পেয়েছি, যা হয়েছি যা-কিছু মোর আশা। না জেনে ধায় তোমার পানে সকল ভালোবাসা। মিলন হবে তোমার সাথে, একটি শুভ দৃষ্টিপাতে, জীবনবধূ হবে তোমার নিত্য অনুগতা; মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা। বরণমালা গাঁথা আছে, আমার চিত্তমাঝে, কবে নীরব হাস্যমুখে আসবে বরের সাজে। সেদিন আমার রবে না ঘর, কেই-বা আপন, কেই-বা অপর, বিজন রাতে পতির সাথে মিলবে পতিব্রতা। মরণ, আমার মরণ, তুমি কও আমারে কথা।
নহে নহে এ মনে মরণ। সহসা এ প্রাণপূর্ণ নিশ্বাসবাতাস নীরবে করে যে পলায়ন, আলোতে ফুটায় আলো এই আঁখিতারা নিবে যায় একদা নিশীথে, বহে না রুধিরনদী, সুকোমল তনু ধূলায় মিলায় ধরণীতে, ভাবনা মিলায় শূন্যে, মৃত্তিকার তলে রুদ্ধ হয় অময় হৃদয়-- এই মৃত্যু? এ তো মৃত্যু নয়। কিন্তু রে পবিত্র শোক যায় না যে দিন পিরিতির স্মিরিতিমন্দিরে, উপেক্ষিত অতীতের সমাধির 'পরে তৃণরাজি দোলে ধীরে ধীরে, মরণ-অতীত চির-নূতন পরান স্মরণে করে না বিচরণ-- সেই বটে সেই তো মরণ!
হেথায় তিনি কোল পেতেছেন আমাদের এই ঘরে। আসনটি তাঁর সাজিয়ে দে ভাই, মনের মতো করে। গান গেয়ে আনন্দমনে ঝাঁটিয়ে দে সব ধুলা। যত্ন করে দূর করে দে আবর্জনাগুলা। জল ছিটিয়ে ফুলগুলি রাখ সাজিখানি ভরে-- আসনটি তাঁর সাজিয়ে দে ভাই, মনের মতো করে। দিনরজনী আছেন তিনি আমাদের এই ঘরে, সকালবেলায় তাঁরি হাসি আলোক ঢেলে পড়ে। যেমনি ভোরে জেগে উঠে নয়ন মেলে চাই, খুশি হয়ে আছেন চেয়ে দেখতে মোরা পাই। তাঁরি মুখের প্রসন্নতায় সমস্ত ঘর ভরে। সকালবেলায় তাঁর হাসি আলোক ঢেলে পড়ে। একলা তিনি বসে থাকেন আমাদের এই ঘরে আমরা যখন অন্য কোথাও চলি কাজের তরে, দ্বারের কাছে তিনি মোদের এগিয়ে দিয়ে যান-- মনের সুখে ধাই রে পথে, আনন্দে গাই গান। দিনের শেষে ফিরি যখন নানা কাজের পরে, দেখি তিনি একলা বসে আমাদের এই ঘরে। তিনি জেগে বসে থাকেন আমাদের এই ঘরে আমরা যখন অচেতনে ঘুমাই শয্যা-'পরে। জগতে কেউ দেখতে না পায় লুকানো তাঁর বাতি, আঁচল দিয়ে আড়াল ক'রে জ্বালান সারা রাতি। ঘুমের মধ্যে স্বপন কতই আনাগোনা করে, অন্ধকারে হাসেন তিনি আমাদের এই ঘরে।