প্রাণগঙ্গা (prangonga)
প্রতিদিন নদীস্রোতে পুষ্পপত্র করি অর্ঘ্য দান
পূজারির পূজা-অবসান।
আমিও তেমনি যত্নে মোর ডালি ভরি
গানের অঞ্জলি দান করি
প্রাণের জাহ্নবীজলধারে,
পূজি আমি তারে।
বিগলিত প্রেমের আনন্দবারি সে যে,
এসেছে বৈকুণ্ঠধাম ত্যেজে।
মৃত্যুঞ্জয় শিবের অসীম জটাজালে
ঘুরে ঘুরে কালে কালে
তপস্যার তাপ লেগে প্রবাহ পবিত্র হল তার।
কত-না যুগের পাপভার
নিঃশেষে ভাসায়ে দিল অতলের-মাঝে।
তরঙ্গে তরঙ্গে তার বাজে
ভবিষ্যের মঙ্গলসংগীত।
তটে তটে বাঁকে বাঁকে অনন্তের চলেছে ইঙ্গিত।
দৈবস্পর্শে তার
আমারে সে ধূলি হতে করিল উদ্ধার;
অঙ্গে অঙ্গে দিল তার তরঙ্গের দোল;
কণ্ঠে দিল আপন কল্লোল।
আলোকের নৃত্যে মোর চক্ষু দিল ভরি
বর্ণের লহরী।
খুলে গেল অনন্তের কালো উত্তরীয়;
কত রূপে দেখা দিল প্রিয়,
অনির্বচনীয়।
তাই মোর গান
কুসুম-অঞ্জলি-অর্ঘ্যদান
প্রাণজাহ্নবীরে।
তাহারি আবর্তে ফিরে ফিরে
এ পূজার কোনো ফুল নাও যদি ভাসে চিরদিন,
বিস্মৃতির তলে হয় লীন,
তবে তার লাগি, কহো,
কার সাথে আমার কলহ।
এই নীলাম্বরতলে তৃণরোমাঞ্চিত ধরণীতে
বসন্তে বর্ষায় গ্রীষ্মে শীতে
প্রতিদিবসের পূজা প্রতিদিন করি অবসান
ধন্য হয়ে ভেসে যাক গান।