দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা-পরা ওই ছায়া ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ। ও পারেতে সোনার কূলে আঁধারমূলে কোন্ মায়া গেয়ে গেল কাজ-ভাঙানো গান। নামিয়ে মুখ চুকিয়ে সুখ যাবার মুখে যায় যারা ফেরার পথে ফিরেও নাহি চায়, তাদের পানে ভাঁটার টানে যাব রে আজ ঘরছাড়া-- সন্ধ্যা আসে দিন যে চলে যায়। ওরে আয় আমায় নিয়ে যাবি কে রে দিনশেষের শেষ খেয়ায়। সাঁজের বেলা ভাঁটার স্রোতে ও পার হতে একটানা একটি-দুটি যায় যে তরী ভেসে। কেমন করে চিনব ওরে ওদের মাঝে কোন্খানা আমার ঘাটে ছিল আমার দেশে। অস্তাচলে তীরের তলে ঘন গাছের কোল ঘেঁষে ছায়ায় যেন ছায়ার মতো যায়, ডাকলে আমি ক্ষণেক থামি হেথায় পাড়ি ধরবে সে এমন নেয়ে আছে রে কোন্ নায়। ওরে আয় আমায় নিয়ে যাবি কে রে দিনশেষের শেষ খেয়ায়। ঘরেই যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে, পারে যারা যাবার গেছে পারে; ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে। ফুলের বার নাইকো আর, ফসল যার ফলল না-- চোখের জল ফেলতে হাসি পায়-- দিনের আলো যার ফুরালো, সাঁজের আলো জ্বলল না, সেই বসেছে ঘাটের কিনারায়। ওরে আয় আমায় নিয়ে যাবি কে রে বেলাশেষের শেষ খেয়ায়।
তোমার আমার মাঝে ঘন হল কাঁটার বেড়া এ কখন সহসা রাতারাতি-- স্বদেশের অশ্রুজলে তারেই কি তুলিবে বাড়ায়ে ওরে মূঢ়, ওরে আত্মঘাতী? ওই সর্বনাশটাকে ধর্মের দামেতে কর দামী, ঈশ্বরের কর অপমান-- আঙিনা করিয়া ভাগ দুই পাশে তুমি আর আমি পূজা করি কোন্ শয়তান! ও কাঁটা দলিতে গেলে দুই দিকে ধর্মধ্বজী দলে ধিক্কারিবে তাহে ভয় নাই-- এ পাপ আড়ালখানা উপাড়ি ফেলিব ধূলিতলে, জানিব আমরা দোঁহে ভাই। দুই হাত মেলে নাই এত কাল ধরে তাই বার বার বিধাতার দান ব্যর্থ হল--অবশেষে আশীর্বাদ কাছে এসে অভিশাপে হল অবসান। তবুও মানবদ্রোহে স্পর্ধাভরে সমারোহে চল যদি অন্ধতার পথে, এই কথা জেনে যেয়ো বাঁচাবে যে মূঢ়কেও হেন শক্তি নাই এ জগতে।