ফল ধরেছে বটের ডালে ডালে; অফুরন্ত আতিথ্যে তার সকালে বৈকালে বনভোজনে পাখিরা সব আসছে ঝাঁকে ঝাঁক। মাঠের ধারে আমার ছিল চড়িভাতির ডাক। যে যার আপন ভাঁড়ার থেকে যা পেল যেইখানে মালমসলা নানারকম জুটিয়ে সবাই আনে। জাত-বেজাতের চালে ডালে মিশোল ক'রে শেষে ডুমুরগাছের তলাটাতে মিলল সবাই এসে। বারে বারে ঘটি ভ'রে জল তুলে কেউ আনে, কেউ চলেছে কাঠের খোঁজে আমবাগানের পানে। হাঁসের ডিমের সন্ধানে কেউ গেল গাঁয়ের মাঝে, তিন কন্যা লেগে গেল রান্নাকরার কাজে। গাঁঠ-পাকানো শিকড়েতে মাথাটা তার থুয়ে কেউ পড়ে যায় গল্পের বই জামের তলায় শুয়ে। সকল-কর্ম-ভোলা দিনটা যেন ছুটির নৌকা বাঁধন-রশি-খোলা চলে যাচ্ছে আপনি ভেসে সে কোন্ আঘাটায় যথেচ্ছ ভাঁটায়। মানুষ যখন পাকা ক'রে প্রাচীর তোলে নাই মাঠে বনে শৈলগুহায় যখন তাহার ঠাঁই, সেইদিনকার আল্গা-বিধির বাইরে-ঘোরা প্রাণ মাঝে মাঝে রক্তে আজও লাগায় মন্ত্রগান। সেইদিনকার যথেচ্ছ-রস আস্বাদনের খোঁজে মিলেছিলেম অবেলাতে অনিয়মের ভোজে। কারো কোনো স্বত্বদাবীর নেই যেখানে চিহ্ন, যেখানে এই ধরাতলের সহজ দাক্ষিণ্য, হালকা সাদা মেঘের নিচে পুরানো সেই ঘাসে, একটা দিনের পরিচিত আমবাগানের পাশে, মাঠের ধারে, অনভ্যাসের সেবার কাজে খেটে কেমন ক'রে কয়টা প্রহর কোথায় গেল কেটে। সমস্ত দিন ডাকল ঘুঘু দুটি। আশে পাশে এঁটোর লোভে কাক এল সব জুটি, গাঁয়ের থেকে কুকুর এল, লড়াই গেল বেধে-- একটা তাদের পালালো তার পরাভবের খেদে। রৌদ্র পড়ে এল ক্রমে, ছায়া পড়ল বেঁকে, ক্লান্ত গোরু গাড়ি টেনে চলেছে হাট থেকে। আবার ধীরে ধীরে নিয়ম-বাঁধা যে-যার ঘরে চলে গেলেম ফিরে। একটা দিনের মুছল স্মৃতি, ঘুচল চড়িভাতি, পোড়াকাঠের ছাই পড়ে রয়, নামে আঁধার রাতি।
তুই কি ভাবিস, দিনরাত্তির খেলতে আমার মন? কক্খনো তা সত্যি না, মা,-- আমার কথা শোন্। সেদিন ভোরে দেখি উঠে বৃষ্টিবাদল গেছে ছুটে, রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে-- বাঁশের ডালে ডালে; ছুটির দিনে কেমন সুরে পুজোর সানাই বাজছে দূরে, তিনটে শালিখ ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালে;-- খেলনাগুলো সামনে মেলি' কী যে খেলি, কী যে খেলি, সেই কথাটাই সমস্তখন ভাবনু আপন মনে। লাগল না ঠিক কোনো খেলাই, কেটে গেল সারাবেলাই, রেলিং ধরে রইনু বসে বারান্দাটার কোণে। খেলা-ভোলার দিন, মা, আমার আসে মাঝে মাঝে। সেদিন আমার মনের ভিতর কেমনতরো বাজে। শীতের বেলায় দুই পহরে দূরে কাদের ছাদের 'পরে ছোট্ট মেয়ে রোদ্দুরে দেয় বেগনি রঙের শাড়ি। চেয়ে চেয়ে চুপ করে রই, তেপান্তরের পার বুঝি ঐ, মনে ভাবি ঐখানেতেই আছে রাজার বাড়ি। থাকত যদি মেঘে-ওড়া পক্ষিরাজের বাচ্ছা ঘোড়া তক্খুনি যে যেতেম তারে লাগাম দিয়ে কষে। যেতে যেতে নদীর তীরে ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমীরে পথ শুধিয়ে নিতেম আমি গাছের তলায় বসে। একেক দিন যে দেখেছি, তুই বাবার চিঠি হাতে চুপ করে কী ভাবিস বসে ঠেস দিয়ে জানলাতে। মনে হয় তোর মুখে চেয়ে তুই যেন কোন্দেশের মেয়ে, যেন আমার অনেক কালের অনেক দূরের মা। কাছে গিয়ে হাতখানি ছুঁই হারিয়ে-ফেলা মা যেন তুই, মাঠ-পারে কোন্ বটের তলার বাঁশির সুরের মা। খেলার কথা যায় যে ভেসে, মনে ভাবি কোন্ কালে সে কোন্ দেশে তোর বাড়ি ছিল কোন্ সাগরের কূলে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে অজানা সেই দ্বীপের ঘরে তোমায় আমায় ভোরবেলাতে নৌকোতে পাল তুলে।
IN THIS moment I see you seated upon the morning's golden carpet. The sun shines in your crown, the stars drop at your feet, the crowds come and bow to you and go, and the poet sits speechless in the corner.