চোখ ঘুমে ভোরে আসে, মাঝে-মাঝে উঠছি জেগে যেমন নববর্ষার প্রথম পসলা বৃষ্টির জল মাটি চুঁইয়ে পৌঁছয় গাছের শিকড়ে এসে, তেমনি তরুণ হেমন্তের আলো ঘুমের ভিতর দিয়ে লেগেছে আমার অচেতন প্রাণের মূলে। বেলা এগোল তিন প্রহরের কাছে। পাতলা সাদা মেঘের টুকরো স্থির হয়ে ভাসছে কার্তিকের রোদ্দুরে-- দেবশিশুদের কাগজের নৌকো। পশ্চিম থেকে হাওয়া দিয়েছে বেগে, দোলাদুলি লেগেছে তেঁতুলগাছের ডালে। উত্তরে গোয়ালপাড়ার রাস্তা, গোরুর গাড়ি বিছিয়ে দিল গেরুয়া ধুলো ফিকে নীল আকাশে। মধ্যদিনের নিঃশব্দ প্রহরে অকাজে ভেসে যায় আমার মন ভাবনাহীন দিনের ভেলায়। সংসারের ঘাটের থেকে রশি-ছেঁড়া এই দিন বাঁধা নেই কোনো প্রয়োজনে। রঙের নদী পেরিয়ে সন্ধ্যাবেলায় অদৃশ্য হবে নিস্তরঙ্গ ঘুমের কালো সমুদ্রে। ফিকে কালিতে এই দিনটার চিহ্ন পড়ল কালের পাতায়, দেখতে দেখতে যাবে সে মিলিয়ে। ঘন অক্ষরে যে-সব দিন আঁকা পড়ে মানুষের ভাগ্যলিপিতে, তার মাঝখানে এ রইল ফাঁকা। গাছের শুকনো পাতা মাটিতে ঝরে-- সেও শোধ করে যায় মাটির দেনা, আমার এই অলস দিনের ঝরা পাতা লোকারণ্যকে কিছুই দেয় নি ফিরিয়ে। তবু মন বলে, গ্রহণ করাও ফিরিয়ে-দেওয়ার রূপান্তর। সৃষ্টির ঝর্না বেয়ে যে রস নামছে আকাশে আকাশে তাকে মেনে নিয়েছি আমার দেহে মনে। সেই রঙিন ধারায় আমার জীবনে রঙ লেগেছে-- যেমন লেগেছে ধানের খেতে, যেমন লেগেছে বনের পাতায়, যেমন লেগেছে শরতে বিবাগী মেঘের উত্তরীয়ে । এরা সবাই মিলে পূর্ণ করেছে আজকে-দিনের বিশ্বছবি । আমার মনের মধ্যে চিকিয়ে উঠল আলোর ঝলক, হেমন্তের আতপ্ত নিশ্বাস শিহর লাগালো ঘুম-জাগরণের গঙ্গাযমুনায়-- এও কি মেলে নি এই নিখিল ছবির পটে । জল-স্থল-আকাশের রসসত্রে অশথের চঞ্চল পাতার সঙ্গে ঝলমল করছে আমার যে অকারণ খুশি বিশ্বের ইতিবৃত্তের মধ্যে রইল না তার রেখা, তবু বিশ্বের প্রকাশের মধ্যে রইল তার শিল্প । এই রসনিমগ্ন মুহূর্তগুলি আমার হৃদয়ের রক্তপদ্মের বীজ, এই নিয়ে ঋতুর দরবারে গাঁথা চলেছে একটি মালা -- আমার চিরজীবনের খুশির মালা । আজ অকর্মণ্যের এই অখ্যাত দিন ফাঁক রাখে নি ঐ মালাটিতে -- আজও একটি বীজ পড়েছে গাঁথা । কাল রাত্রি একা কেটেছে এই জানালার ধারে । বনের ললাটে লগ্ন ছিল শুক্লপঞ্চমীর চাঁদের রেখা । এও সেই একই জগৎ, কিন্তু গুণী তার রাগিণী দিলেন বদল ক'রে ঝাপসা আলোর মূর্ছনায় । রাস্তায়-চলা ব্যস্ত যে পৃথিবী এখন আঙিনায়-আঁচল-মেলা তার স্তব্ধ রূপ । লক্ষ নেই কাছের সংসারে, শুনছে তারার আলোয় গুঞ্জরিত পুরাণকথা । মনে পড়ছে দূর বাষ্পযুগের শৈশবস্মৃতি । গাছগুলো স্তম্ভিত, রাত্রির নিঃশব্দতা পুঞ্জিত যেন দেহ নিয়ে । ঘাসের অস্পষ্ট সবুজে সারি সারি পড়েছে ছায়া । দিনের বেলায় জীবনযাত্রার পথের ধারে সেই ছায়াগুলি ছিল সেবাসহচরী; তখন রাখালকে দিয়েছে আশ্রয়, মধ্যাহ্নের তীব্রতায় দিয়েছে শান্তি । এখন তাদের কোনো দায় নেই জ্যোৎস্নারাতে; রাত্রের আলোর গায়ে গায়ে বসেছে ওরা, ভাইবোনে মিলে বুলিয়েছে তুলি খামখেয়ালি রচনার কাজে । আমার দিনের বেলাকার মন আপন সেতারের পর্দা দিয়েছে বদল ক'রে । যেন চলে গেলেম পৃথিবীর কোনো প্রতিবেশী গ্রহে, তাকে দেখা যায় দুরবীনে । যে গভীর অনুভূতিতে নিবিড় হল চিত্ত সমস্ত সৃষ্টির অন্তরে তাকে দিয়েছি বিস্তীর্ণ ক'রে। ওই চাঁদ ওই তারা ওই তমঃপুঞ্জ গাছগুলি এক হল,বিরাট হল,সম্পূর্ণ হল আমার চেতনায় । বিশ্ব আমাকে পেয়েছে, আমার মধ্যে পেয়েছে আপনাকে অলস কবির এই সার্থকতা ।
জানি নাই গো সাধন তোমার বলে কারে। আমি ধুলায় বসে খেলেছি এই তোমার দ্বারে। অবোধ আমি ছিলেম বলে যেমন খুশি এলেম চলে ভয় করি নি তোমায় আমি অন্ধকারে। তোমার জ্ঞানী আমায় বলে কঠিন তিরস্কারে "পথ দিয়ে তুই আসিস নি যে ফিরে যা রে।" ফেরার পন্থা বন্ধ ক'রে আপনি বাঁধো বাহুর ডোরে, ওরা আমায় মিথ্যা ডাকে বারে বারে।
I FOUND A few old letters of mine carefully hidden in her box- a few small toys for her memory to play with. With a timorous heart she tried to steal these trifles from time's turbulent stream, and said, 'These are mine only!' Ah, there is no one now to claim them, who can pay their price with loving care, yet here they are still. Surely there is love in this world to save her from utter loss, even like this love of hers that saved these letters with such fond care.