সেই ভালো, প্রতি যুগ আনে না আপন অবসান, সম্পূর্ণ করে না তার গান; অতৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস রেখে দিয়ে যায় সে বাতাসে। তাই যবে পরযুগে বাঁশির উচ্ছ্বাসে বেজে ওঠে গানখানি তার মাঝে সুদূরের বাণী কোথায় লুকায়ে থাকে, কী বলে সে বুঝিতে কে পারে; যুগান্তরের ব্যথা প্রত্যহের ব্যথার মাঝারে মিলায় অশ্রুর বাষ্পজল; অতীতের সূর্যাস্তের কাল আপনার সকরুণ বর্ণচ্ছটা মেলে মৃত্যুর ঐশ্বর্য দেয় ঢেলে, নিমেষের বেদনারে করে সুবিপুল। তাই বসন্তের ফুল নাম-ভুলে-যাওয়া প্রেয়সীর নিশ্বাসের হাওয়া যুগান্তর-সাগরের দ্বীপান্তর হতে বহি আনে। যেন কী অজানা ভাষা মিশে যায় প্রণয়ীর কানে পরিচিত ভাষাটির সাথে, মিলনের রাতে।
নদীর পালিত এই জীবন আমার। নানা গিরিশিখরের দান নাড়ীতে নাড়ীতে তার বহে, নানা পলিমাটি দিয়ে ক্ষেত্র তার হয়েছে রচিত, প্রাণের রহস্যরস নানা দিক হতে শস্যে শস্যে লভিল সঞ্চার। পূর্বপশ্চিমের নানা গীতস্রোতজালে ঘেরা তার স্বপ্ন জাগরণ। যে নদী বিশ্বের দূতী দূরকে নিকটে আনে, অজানার অভ্যর্থনা নিয়ে আসে ঘরের দুয়ারে। সে আমার রচেছিল জন্মদিন-- চিরদিন তার স্রোতে বাঁধন-বাহিরে মোর চলমান বাসা ভেসে চলে তীর হতে তীরে। আমি ব্রাত্য, আমি পথচারী, অবারিত আতিথ্যের অন্নে পূর্ণ হয়ে ওঠে বারে বারে নির্বিচারে মোর জন্মদিবসের থালি।