ও আমার মন যখন জাগলি না রে তোর মনের মানুষ এল দ্বারে। তার চলে যাবার শব্দ শুনে ভাঙল রে ঘুম-- ও তোর ভাঙল রে ঘুম অন্ধকারে। মাটির 'পরে আঁচল পাতি' একলা কাটে নিশীথ রাতি, তার বাঁশি বাজে আঁধার-মাঝে দেখি না যে চক্ষে তারে। ওরে তুই যাহারে দিলি ফাঁকি খুঁজে তারে পায় কি আঁখি? এখন পথে ফিরে পাবি কি রে ঘরের বাহির করলি যারে।
কে আমারে যেন এনেছে ডাকিয়া, এসেছি ভুলে। তবু একবার চাও মুখপানে নয়ন তুলে। দেখি, ও নয়নে নিমেষের তরে সেদিনের ছায়া পড়ে কি না পড়ে, সজল আবেগে আঁখিপাতা দুটি পড়ে কি ঢুলে। ক্ষণেকের তরে ভুল ভাঙায়ো না, এসেছি ভুলে। বেল-কুঁড়ি দুটি করে ফুটি-ফুটি অধর খোলা। মনে পড়ে গেল সেকালের সেই কুসুম তোলা। সেই শুকতারা সেই চোখে চায়, বাতাস কাহারে খুঁজিয়া বেড়ায়, উষা না ফুটিতে হাসি ফুটে তার গগনমূলে। সেদিন যে গেছে ভুলে গেছি, তাই এসেছি ভুলে। ব্যথা দিয়ে কবে কথা কয়েছিলে পড়ে না মনে, দূরে থেকে কবে ফিরে গিয়েছিলে নাই স্মরণে। শুধু মনে পড়ে হাসিমুখখানি, লাজে বাধো-বাধো সোহাগের বাণী, মনে পড়ে সেই হৃদয়-উছাস নয়ন-কূলে। তুমি যে ভুলেছ ভুলে গেছি, তাই এসেছি ভুলে। কাননের ফুল, এরা তো ভোলে নি, আমরা ভুলি? সেই তো ফুটেছে পাতায় পাতায় কামিনীগুলি। চাঁপা কোথা হতে এনেছে ধরিয়া অরুণকিরণ কোমল করিয়া, বকুল ঝরিয়া মরিবারে চায় কাহার চুলে? কেহ ভোলে, কেউ ভোলে না যে, তাই এসেছি ভুলে। এমন করিয়া কেমনে কাটিবে মাধবী রাতি? দখিনে বাতাসে কেহ নেই পাশে সাথের সাথি। চারি দিক হতে বাঁশি শোনা যায়, সুখে আছে যারা তারা গান গায়-- আকুল বাতাসে, মদির সুবাসে, বিকচ ফুলে, এখনো কি কেঁদে চাহিবে না কেউ আসিলে ভুলে?