মধ্যাহ্নে বিজন বাতায়নে সুদূর গগনে কী দেখে সে ধানের খেতের পরপারে-- নিরালা নদীর পথে দিগন্তে সবুজ অন্ধকারে যেখানে কাঁঠাল জাম নারিকেল বেত প্রসারিয়া চলেছে সংকেত অজানা গ্রামের, সুখ দুঃখ জন্ম মৃত্যু অখ্যাত নামের। অপরাহ্নে ছাদে বসি এলোচুল বুকে পড়ে খসি, গ্রন্থ নিয়ে হাতে উদাস হয়েছে মন সে যে কোন্ কবিকল্পনাতে। সুদূরের বেদনায় অতীতের অশ্রুবাষ্প হৃদয়ে ঘনায়। বীরের কাহিনী না-দেখা জনের লাগি তারে যেন করে বিরহিণী। পূর্ণিমানিশীথে স্রোতে-ভাসা একা তরী যবে সকরুণ সারিগীতে ছায়াঘন তীরে তীরে সুপ্তিতে সুরের ছবি আঁকে উৎসুক আকাঙক্ষা জেগে থাকে নিষুপ্ত প্রহরে, অহৈতুক বারিবিন্দু ঝরে আঁখিকোণে; যুগান্তরপার হতে কোন্ পুরাণের কথা শোনে। ইচ্ছা করে সেই রাতে লিপিখানি লেখে ভূর্জপাতে লেখনীতে ভরি লয়ে দুঃখে-গলা কাজলের কালি-- নাম কি খেয়ালী।
আজ এ মনের কোন্ সীমানায় যুগান্তরের প্রিয়া। দূরে-উড়ে-যাওয়া মেঘের ছিদ্র দিয়া কখনো আসিছে রৌদ্র কখনো ছায়া, আমার জীবনে তুমি আজ শুধু মায়া; সহজে তোমায় তাই তো মিলাই সুরে, সহজেই ডাকি সহজেই রাখি দূরে। স্বপ্নরূপিণী তুমি আকুলিয়া আছ পথ-খোওয়া মোর প্রাণের স্বর্গভূমি। নাই কোনো ভার, নাই বেদনার তাপ, ধূলির ধরায় পড়ে না পায়ের ছাপ। তাই তো আমার ছন্দে সহসা তোমার চুলের ফুলের গন্ধে জাগে নির্জন রাতের দীর্ঘশ্বাস, জাগে প্রভাতের পেলব তারায় বিদায়ের স্মিত হাস। তাই পথে যেতে কাশের বনেতে মর্মর দেয় আনি পাশ-দিয়ে-চলা ধানী-রঙ-করা শাড়ির পরশখানি। যদি জীবনের বর্তমানের তীরে আস কভু তুমি ফিরে স্পষ্ট আলোয়, তবে জানি না তোমার মায়ার সঙ্গে কায়ার কি মিল হবে। বিরহস্বর্গলোকে সে-জাগরণের রূঢ় আলোয় চিনিব কি চোখে-চোখে। সন্ধ্যাবেলায় যে-দ্বারে দিয়েছ বিরহকরুণ নাড়া, মিলনের ঘায়ে সে-দ্বার খুলিলে কাহারো কি পাবে সাড়া।