শ্রীযুক্ত নন্দলাল বসুর পাহাড়-আঁকা চিত্রপত্রিকার উত্তরে শুক বলে, গিরিরাজের জগতে প্রাধান্য; সারী বলে, মেঘমালা, সেই বা কী সামান্য,-- গিরির মাথায় থাকে। শুক বলে, গিরিরাজের দৃঢ় অচল শিলা; সারী বলে, মেঘমালার আদি-অন্তই লীলা,-- বাঁধবে কে-বা তাকে। শুক বলে, নদীর জলে গিরি ঢালেন প্রাণ; সারী বলে, তার পিছনে মেঘমালার দান,-- তাই তো নদী আছে। শুক বলে, গিরীশ থাকেন গিরিতে দিনরাত্র; সারী বলে, অন্নপূর্ণা ভরেন ভিক্ষাপাত্র ,-- সে তো মেঘের কাছে।
শুক বলে, হিমাদ্রি যে ভারত করে ধন্য; সারী বলে, মেঘমালা বিশ্বেরে দেয় স্তন্য ,-- বাঁচে সকল জন। শুক বলে, সমাধিতে স্তব্ধ গিরির দৃষ্টি; সারী বলে, মেঘমালার নিত্যনূতন সৃষ্টি,-- তাই সে চিরন্তন।
কেউ চেনা নয় সব মানুষই অজানা। চলেছে আপনার রহস্যে আপনি একাকী। সেখানে তার দোসর নেই। সংসারের ছাপমারা কাঠামোয় মানুষের সীমা দিই বানিয়ে। সংজ্ঞার বেড়া-দেওয়া বসতির মধ্যে বাঁধা মাইনের কাজ করে সে। থাকে সাধারণের চিহ্ন নিয়ে ললাটে। এমন সময় কোথা থেকে ভালোবাসার বসন্ত-হাওয়া লাগে, সীমার আড়ালটা যায় উড়ে, বেরিয়ে পড়ে চির-অচেনা। সামনে তাকে দেখি স্বয়ংস্বতন্ত্র, অপূর্ব, অসাধারণ, তার জুড়ি কেউ নেই। তার সঙ্গে যোগ দেবার বেলায় বাঁধতে হয় গানের সেতু, ফুলের ভাষায় করি তার অভ্যর্থনা। চোখ বলে, যা দেখলুম, তুমি আছ তাকে পেরিয়ে। মন বলে চোখে-দেখা কানে-শোনার ওপারে যে রহস্য তুমি এসেছ সেই অগমের দূত,-- রাত্রি যেমন আসে পৃথিবীর সামনে নক্ষত্রলোক অবারিত ক'রে। তখন হঠাৎ দেখি আমার মধ্যেকার অচেনাকে, তখন আপন অনুভবের তল খুঁজে পাইনে, সেই অনুভব "তিলে তিলে নূতন হোয়।"