"সাত-আটটে সাতাশ," আমি বলেছিলাম বলে গুরুমশায় আমার 'পরে উঠল রাগে জ্বলে। মা গো, তুমি পাঁচ পয়সায় এবার রথের দিনে সেই যে রঙিন পুতুলখানি আপনি দিলে কিনে খাতার নিচে ছিল ঢাকা; দেখালে এক ছেলে, গুরুমশায় রেগেমেগে ভেঙে দিলেন ফেলে। বল্লেন, "তোর দিনরাত্তির কেবল যত খেলা। একটুও তোর মন বসে না পড়াশুনার বেলা!" মা গো, আমি জানাই কাকে? ওঁর কি গুরু আছে? আমি যদি নালিশ করি এক্খনি তাঁর কাছে? কোনোরকম খেলার পুতুল নেই কি, মা, ওঁর ঘরে সত্যি কি ওঁর একটুও মন নেই পুতুলের 'পরে? সকালসাঁজে তাদের নিয়ে করতে গিয়ে খেলা কোনো পড়ায় করেন নি কি কোনোরকম হেলা? ওঁর যদি সেই পুতুল নিয়ে ভাঙেন কেহ রাগে, বল দেখি, মা, ওঁর মনে তা কেমনতরো লাগে?
না রে, তোদের ফিরতে দেব না রে-- মরণ যেথায় লুকিয়ে বেড়ায় সেই আরামের দ্বারে। চলতে হবে সামনে সোজা, ফেলতে হবে মিথ্যা বোঝা, টলতে আমি দেব না যে আপন ব্যথাভারে। না রে, তোদের রইতে দেব না রে-- দিবানিশি ধুলাখেলায় খেলাঘরের দ্বারে। চলতে হবে আশার গানে প্রভাত-আলোর উদয়-পানে, নিমেষতরে পাবি নেকো বসতে পথের ধারে। না রে, তোদের থামতে দেব না রে-- কানাকানি করতে কেবল কোণের ঘরের দ্বারে। ওই যে নীরব বজ্রবাণী আগুন বুকে দিচ্ছে হানি-- সইতে হবে, বইতে হবে, মানতে হবে তারে।