নারীর দুখের দশা অপমানে জড়ানো এই দেখি দিকে দিকে ঘরে ঘরে ছড়ানো। জানো কি এ অন্যায় সমাজের হিসাবে নিমেষে নিমেষে কত হলাহল মিশাবে? পুরুষ জেনেছে এটা বিধিনির্দিষ্ট তাদের জীবন-ভোজে নারী উচ্ছিষ্ট। রোগ-তাপে সেবা পায়, লয় তাহা অলসে-- সুধা কেন ঢালে বিধি ছিদ্র এ কলসে! সমসম্মান হেথা নাহি মানে পুরুষে, নিজ প্রভুপদমদে তুলে রয় ভুরু সে। অর্ধেক কাপুরুষ অর্ধেক রমণী তাতেই তো নাড়ীছাড়া এ দেশের ধমণী। বুঝিতে পারে না ওরা-- এ বিধানে ক্ষতি কার। জানি না কী বিপ্লবে হবে এর প্রতিকার। একদা পুরুষ যদি পাপের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়ে নারীর পাশে নাহি নামে যুদ্ধে অর্ধেক-কালি-মাখা সমাজের বুকটা খাবে তবে বারে বারে শনির চাবুকটা। এত কথা বৃথা বলা--যে পেয়েছে ক্ষমতা নিঃসহায়ের প্রতি নাই তার মমতা, আপনার পৌরুষ করি দিয়া লাঞ্ছিত অবিচার করাটাই হয় তার বাঞ্ছিত।
পথে যতদিন ছিনু ততদিন অনেকের সনে দেখা। সব শেষ হল যেখানে সেথায় তুমি আর আমি একা। নানা বসন্তে নানা বরষায় অনেক দিবসে অনেক নিশায় দেখেছি অনেক, সহেছি অনেক, লিখেছি অনেক লেখা-- পথে যতদিন ছিনু ততদিন অনেকের সনে দেখা। কখন যে পথ আপনি ফুরালো, সন্ধ্যা হল যে কবে! পিছনে চাহিয়া দেখিনু কখন চলিয়া গিয়াছে সবে। তোমার নীরব নিভৃত ভবনে জানি না কখন পশিনু কেমনে। অবাক রহিনু আপন প্রাণের নূতন গানের রবে। কখন যে পথ আপনি ফুরালো, সন্ধ্যা হল যে কবে! চিহ্ন কি আছে শ্রান্ত নয়নে অশ্রুজলের রেখা? বিপুল পথের বিবিধ কাহিনী আছে কি ললাটে লেখা? রুধিয়া দিয়েছ তব বাতায়ন, বিছানো রয়েছে শীতল শয়ন, তোমার সন্ধ্যাপ্রদীপ-আলোকে তুমি আর আমি একা। নয়নে আমার অশ্রুজলের চিহ্ন কি যায় দেখা!