ওকে বাঁধিবি কে রে, হবে যে ছেড়ে দিতে। ওর পথ খোলে রে বিদায়রজনীতে॥ গগনে তার মেঘদুয়ার ঝেঁপে বুকেরই ধন বুকেতে ছিল চেপে, প্রভাতবায়ে গেল সে দ্বার কেঁপে-- এল যে ডাক ভোরের রাগিণীতে॥ শীতল হোক বিমল হোক প্রাণ, হৃদয়ে শোক রাখুক তার দান। যা ছিল ঘিরে শূন্যে সে মিলালো, সে ফাঁক দিয়ে আসুক তবে আলো-- বিজনে বসি পূজাঞ্জলি ঢালো শিশিরে-ভরা সেঁউতি-ঝরা গীতে॥
পুব-হাওয়াতে দেয় দোলা আজ মরি মরি। হৃদয়নদীর কূলে কূলে জাগে লহরী॥ পথ চেয়ে তাই একলা ঘাটে বিনা কাজে সময় কাটে, পাল তুলে ওই আসে তোমার সুরেরই তরী॥ ব্যথা আমার কূল মানে না, বাধা মানে না। পরান আমার ঘুম জানে না, জাগা জানে না। মিলবে যে আজ অকুল-পানে তোমার গানে আমার গানে, ভেসে যাবে রসের বানে আজ বিভাবরী॥
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে তোমারি সুরটি আমার মুখের 'পরে, বুকের 'পরে ॥ পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে দুই নয়ানে-- নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে পড়ুক প্রাণে। নিশিদিন এই জীবনের সুখের 'পরে দুখের 'পরে শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে। যে শাখায় ফুল ফোটে না, ফল ধরে না একেবারে, তোমার ওই বাদল-বায়ে দিক জাগায়ে সেই শাখারে। যা-কিছু জীর্ণ আমার, দীর্ণ আমার, জীবনহারা, তাহারি স্তরে স্তরে পড়ুক ঝরে সুরের ধারা। নিশিদিন এই জীবনের তৃষার 'পরে, ভুখের 'পরে শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে ॥