আমায় ছ জনায় মিলে পথ দেখায় ব’লে পদে পদে পথ ভুলি হে। নানা কথার ছলে নানান মুনি বলে, সংশয়ে তাই দুলি হে।। তোমার কাছে যাব এই ছিল সাধ, তোমার বাণী শুনে ঘুচাব প্রমাদ, কানের কাছে সবাই করিছে বিবাদ– শত লোকের শত বুলি হে।। কাতর প্রাণে আমি তোমায় যখন যাচি আড়াল ক’রে সবাই দাঁড়ায় কাছাকাছি, ধরণীর ধুলো তাই নিয়ে আছি– পাই নে চরণধূলি হে।। শত ভাগ মোর শত দিকে ধায়, আপনা-আপনি বিবাদ বাধায়– কারে সামালিব, একি হল দায়– একা যে অনেকগুলি হে।। আমায় এক করো তোমার প্রেমে বেঁধে, এক পথ আমায় দেখাও অবিচ্ছেদে– ধাঁদার মাঝে প’ড়ে কত মরি কেঁদে– চরণেতে লহো তুলি হে।।
আবার শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে, মেঘ-আঁচলে নিলে ঘিরে॥ সূর্য হারায়, হারায় তারা আঁধারে পথ হয়-যে হারা, ঢেউ দিয়েছে নদীর নীরে॥ সকল আকাশ, সকল ধরা বর্ষণেরই-বাণী-ভরা। ঝরো ঝরো ধারায় মাতি বাজে আমার আঁধার রাতি, বাজে আমার শিরে শিরে॥
আমার গোধূলিলগন এল বুঝি কাছে গোধূলিলগন রে। বিবাহের রঙে রাঙা হয়ে আসে সোনার গগন রে। শেষ ক'রে দিল পাখি গান গাওয়া, নদীর উপরে পড়ে এল হাওয়া; ও পারের তীর, ভাঙা মন্দির আঁধারে মগন রে। আসিছে মধুর ঝিল্লিনূপুরে গোধূলিলগন রে ॥ আমার দিন কেটে গেছে কখনো খেলায়, কখনো কত কী কাজে। এখন কী শুনি পুরবীর সুরে কোন্ দূরে বাঁশি বাজে। বুঝি দেরি নাই, আসে বুঝি আসে, আলোকের আভা লেগেছে আকাশে-- বেলাশেষে মোরে কে সাজাবে, ওরে, নবমিলনের সাজে! সারা হল কাজ, মিছে কেন আজ ডাক মোরে আর কাজে ॥ আমি জানি যে আমার হয়ে গেছে গণা গোধূলিলগন রে। ধূসর আলোকে মুদিবে নয়ন অস্তগগন রে। তখন এ ঘরে কে খুলিবে দ্বার, কে লইবে টানি বাহুটি আমার, আমায় কে জানে কী মন্ত্রে গানে করিবে মগন রে-- সব গান সেরে আসিবে যখন গোধূলিলগন রে ॥