গানের সাজি এনেছি আজি, ঢাকাটি তার লও গো খুলে-- দেখো তো চেয়ে কী আছে। যে থাকে মনে স্বপন-বনে ছায়ার দেশে ভাবের কূলে সে বুঝি কিছু দিয়াছে। কী যে সে তাহা আমি কি জানি, ভাষায়-চাপা কোন্ সে বাণী সুরের ফুলে গন্ধখানি ছন্দে বাঁধি গিয়াছে-- সে ফুল বুঝি হয়েছে পুঁজি, দেখো তো চেয়ে কী আছে। দেখো তো, সখী দিয়েছে ও কি সুখের কাঁদা, দুখের হাসি, দুরাশাভরা চাহনি। দিয়েছে কি না ভোরের বীণা, দিয়েছে কি সে রাতের বাঁশি গহন-গান-গাহনি। বিপুল ব্যথা ফাগুন-বেলা, সোহাগ কভু, কভু বা হেলা, আপন মনে আগুন-খেলা পরানমন-দাহনি-- দেখো তো ডালা, সে স্মৃতি-ঢালা আছে আকুল চাহনি? ডেকেছ কবে মধুর রবে, মিটালে কবে প্রাণের ক্ষুধা তোমার করপরশে, সহসা এসে করুণ হেসে কখন চোখে ঢালিলে সুধা ক্ষণিক তব দরশে-- বাসনা জাগে নিভৃতে চিতে সে-সব দান ফিরায়ে দিতে আমার দিনশেষের গীতে-- সফল তারে করো-সে। গানের সাজি খোলো গো আজি করুণ করপরশে। রসে বিলীন সে-সব দিন ভরেছে আজি বরণডালা চরম তব বরণে! সুরের ডোরে গাঁথনি করে রচিয়া মম বিরহমালা রাখিয়া যাব চরণে। একদা তব মনে না রবে, স্বপনে এরা মিলাবে কবে, তাহারি আগে মরুক তবে অমৃতময় মরণে ফাগুনে তোরে বরণ করে সকল শেষ বরণে।
যে চৈতন্যজ্যোতি প্রদীপ্ত রয়েছে মোর অন্তরগগনে নহে আকস্মিক বন্দী প্রাণের সংকীর্ণ সীমানায়, আদি যার শূন্যময়, অন্তে যার মৃত্যু নিরর্থক, মাঝখানে কিছুক্ষণ যাহা-কিছু আছে তার অর্থ যাহা করে উদ্ভাসিত। এ চৈতন্য বিরাজিত আকাশে আকাশে আনন্দ-অমৃতরূপে-- আজি প্রভাতের জাগরণে এ বাণী উঠিল বাজি মর্মে মর্মে মোর, এ বাণী গাঁথিয়া চলে সূর্য গ্রহ তারা অস্খলিত ছন্দসূত্রে অনিঃশেষ সৃষ্টির উৎসবে।
মিথ্যা আমি কী সন্ধানে যাব কাহার দ্বার। পথ আমারে পথ দেখাবে, এই জেনেছি সার। শুধাতে যাই যারি কাছে, কথার কি তার অন্ত আছে। যতই শুনি চক্ষে ততই লাগায় অন্ধকার। পথের ধারে ছায়াতরু নাই তো তাদের কথা, শুধু তাদের ফুল-ফোটানো মধুর ব্যাকুলতা। দিনের আলো হলে সারা অন্ধকারে সন্ধ্যাতারা শুধু প্রদীপ তুলে ধরে কয় না কিছু আর।