কীর্তনের সুর ভালোবেসে সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখিয়ো--তোমার মনের মন্দিরে। আমার পরানে যে গান বাজিছে তাহারি তালটি শিখিয়ো--তোমার চরণমঞ্জীরে। ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে আমার মুখর পাখিটি--তোমার প্রাসাদপ্রাঙ্গণে। মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো আমার হাতের রাখীটি--তোমার কনককঙ্কণে। আমার লতার একটি মুকুল ভুলিয়া তুলিয়া রাখিয়ো--তোমার অলকবন্ধনে। আমার স্মরণ-শুভ-সিন্দুরে একটি বিন্দু আঁকিয়ো--তোমার ললাটচন্দনে। আমার মনের মোহের মাধুরী মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো গো--তোমার অঙ্গসৌরভে। আমার আকুল জীবনমরণ টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো গো--তোমার অতুল গৌরবে।
হে সুন্দরী, হে শিখা মহতী, তোমার অরূপ জ্যোতি রূপ লবে আমার জীবনে, তারি লাগি একমনে রচিলাম এই দীপখানি, মূর্তিমতী এই মোর অভ্যর্থনাবাণী। এসো এসো করো অধিষ্ঠান মোর দীর্ঘ জীবনের করো গো চরম বরদান। হয় নাই যোগ্য তব, কতবার ভাঙিয়াছি আবার গড়েছি অভিনব -- মোর শক্তি আপনারে দিয়েছে ধিক্কার। সময় নাহি যে আর, নিদ্রাহারা প্রহর-যে একে একে হয় অপগত, তাই আজ সমাপিনু ব্রত। গ্রহণ করো এ মোর চিরজীবনের রচনারে ক্ষণকাল স্পর্শ করো তারে। তার পরে রেখে যাব এ জন্মের এক সার্থকতা, চিরন্তন সুখ মোর, এই মোর চিরন্তন ব্যথা।