কনে দেখা হয়ে গেছে, নাম তার চন্দনা; তোমারে মানাবে ভায়া, অতিশয় মন্দ না। লোকে বলে, খিট্খিটে, মেজাজটা নয় মিঠে-- দেবী ভেবে নেই তারে করিলে বা বন্দনা। কুঁজো হোক, কালো হোক, কালাও না, অন্ধ না।
মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে একটা কী সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে, মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে। মা বুঝি গান গাইত, আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে; মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে। মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু যখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলিবনে শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে, তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে? কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে, পুজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে। মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে; জানলা থেকে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে মনে হয়, মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে। কোলের 'পরে ধরে কবে দেখত আমায় চেয়ে, সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।
যখন ছিলেম পথেরই মাঝখানে মনটা ছিল কেবল চলার পানে বোধ হত তাই, কিছুই তো নাই কাছে-- পাবার জিনিস সামনে দূরে আছে। লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছব এই ঝোঁকে সমস্ত দিন চলেছি এক-রোখে। দিনের শেষে পথের অবসানে মুখ ফিরে আজ তাকাই পিছু-পানে। এখন দেখি পথের ধারে ধারে পাবার জিনিস ছিল সারে সারে-- সামনে ছিল যে দূর সুমধুর পিছনে আজ নেহারি সেই দূর।