১ গভীর গভীরতম হৃদয়প্রদেশে, নিভৃত নিরালা ঠাঁই, লেশমাত্র আলো নাই, লুকানো এ প্রেমসাধ গোপনে নিবসে, শুদ্ধ যবে ভালোবাসা নয়নে তোমার, ঈষৎ প্রদীপ্ত হয়, উচ্ছ্বসয়ে এ-হৃদয়, ভয়ে ভয়ে জড়সড় তখনি আবার। ২ শূন্য এই মরমের সমাধি-গহ্বরে, জ্বলিছে এ প্রেমশিখা চিরকাল-তরে, কেহ না দেখিতে পায়, থেকেও না থাকা প্রায়, নিভিবারও নাম নাই নিরাশার ঘোরে। ৩ যা হবার হইয়াছে-- কিন্তু প্রাণনাথ! নিতান্ত হইবে যবে এ শরীরপাত, আমার সমাধি-স্থানে কোরো নাথ কোরো মনে, রয়েছে এ এক দুঃখিনী হয়ে ধরাসাৎ। ৪ যত যাতনা আছে দলুক আমায়, সহজে সহিতে নাথ সব পারা যায়, কিন্তু হে তুমি-যে মোরে, ভুলে যাবে একেবারে সে কথা করিতে মনে হৃদি ফেটে যায়। ৫ রেখো তবে এই মাত্র কথাটি আমার, এই কথা শেষ কথা, কথা নাহি আর, (এ দেহ হইলে পাত, যদি তুমি প্রাণনাথ, প্রকাশো আমার তরে তিলমাত্র শোক, ধর্মত হবে না দোষী দোষিবে না লোক-- কাতরে বিনয়ে তাই, এই মাত্র ভিক্ষা চাই, কখনো চাহি নে আরো কোনো ভিক্ষা আর) যবে আমি যাব ম'রে, চির এ দুঃখিনী তরে, বিন্দুমাত্র অশ্রুজল ফেলো একবার-- আজন্ম এত যে ভালোবেসেছি তোমায়, সে প্রেমের প্রতিদান একমাত্র প্রতিদান, তা বই কিছুই আর দিয়ো না আমায়।
চক্ষে তোমার কিছু বা করুণা ভাসে, ওষ্ঠ তোমার কিছু কৌতুকে হাসে, মৌনে তোমার কিছু লাগে মৃদু সুর। আলো-আঁধারের বন্ধনে আমি বাঁধা, আশানিরাশায় হৃদয়ে নিত্য ধাঁধা; সঙ্গ যা পাই তারই মাঝে রহে দূর।
নির্মম হতে কুণ্ঠিত হও মনে; অনুকম্পার কিঞ্চিত কম্পনে ক্ষণিকের তরে ছলকে কণিক সুধা। ভাণ্ডার হতে কিছু এনে দাও খুঁজি, অন্তরে তাহা ফিরাইয়া লও বুঝি, বাহিরের ভোজে হৃদয়ে গুমরে ক্ষুধা। ওগো মল্লিকা, তব ফাল্গুনরাতি অজস্র দানে আপনি উঠে যে মাতি, সে দাক্ষিণ্য দক্ষিণবায়ু-তরে! তার সম্পদ সারা অরণ্য ভরি-- গন্ধের ভরে মন্থর উত্তরী কুঞ্জ কুঞ্জ লুণ্ঠিত ধূলি-'পরে। উত্তরবায়ু আমি ভিক্ষুকসম হিমনিশ্বাসে জানাই মিনতি মম শুষ্ক শাখার বীথিকারে চঞ্চলি। অকিঞ্চনের রোদনে ধেয়ান টুটে, কৃপণ দয়ায় ক্বচিৎ একটি ফুটে অবগুণ্ঠিত অকাল পুষ্পকলি। যত মনে ভাবি, রাখি তারে সঞ্চিয়া, ছিঁড়িয়া কাড়িয়া লয় মোরে বঞ্চিয়া প্রলয়প্রবাহে ঝ'রে-পড়া যত পাতা। বিস্ময় লাগে আশাতীত সেই দানে, ক্ষীণ সৌরভে ক্ষণগৌরব আনে-- বরণমাল্য হয় না তাহাতে গাঁথা।