কুষ্মাণ্ডের মনে মনে বড়ো অভিমান বাঁশের মাচাটি তার পুষ্পক বিমান। ভুলেও মাটির পানে তাকায় না তাই, চন্দ্রসূর্যতারকারে করে ভাই ভাই। নভশ্চর ব'লে তার মনের বিশ্বাস, শূণ্যপানে চেয়ে তাই ছাড়ে সে নিশ্বাস। ভাবে শুধু মোটা এই বোঁটাখানা মোরে বেঁধেছে ধরার সাথে কুটুম্বিতা-ডোরে। বোঁটা যদি কাটা পড়ে তখনি পলকে উড়ে যাব আপনার জ্যোতির্ময় লোকে। বোঁটা যবে কাটা গেল, বুঝিল সে খাঁটি, সূর্য তার কেহ নয়, সবই তার মাটি।
আমি আমায় করব বড়ো এই তো আমার মায়া-- তোমার আলো রাঙিয়ে দিয়ে ফেলব রঙিন ছায়া। তুমি তোমায় রাখবে দূরে, ডাকবে তারে নানা সুরে, আপনারি বিরহ তোমার আমায় নিল কায়া। বিরহ-গান উঠল বেজে বিশ্বগগনময়। কত রঙের কান্নাহাসি কতই আশা-ভয়। কত যে ঢেউ ওঠে পড়ে, কত স্বপন ভাঙে গড়ে, আমার মাঝে রচিলে যে আপন পরাজয়। এই যে তোমার আড়ালখানি দিলে তুমি ঢাকা, দিবানিশির তুলি দিয়ে হাজার ছবি আঁকা-- এরি মাঝে আপনাকে যে বাঁধা রেখে বসলে সেজে, সোজা কিছু রাখলে না, সব মধুর বাঁকে বাঁকা। আকাশ জুড়ে আজ লেগেছে তোমার আমার মেলা। দূরে কাছে ছড়িয়ে গেছে তোমার আমার খেলা। তোমার আমার গুঞ্জরণে বাতাস মাতে কুঞ্জবনে, তোমার আমার যাওয়া-আসায় কাটে সকল বেলা।