এই লেখনগুলি সুরু হয়েছিল চীনে জাপানে। পাখায় কাগজে রুমালে কিছু লিখে দেবার জন্যে লোকের অনুরোধে এর উৎপত্তি। তারপরে স্বদেশে ও অন্য দেশেও তাগিদ পেয়েছি। এমনি ক'রে এই টুকরো লেখাগুলি জমে উঠ্ল। এর প্রধান মূল্য হাতের অক্ষরে ব্যক্তিগত পরিচয়ের । সে পরিচয় কেবল অক্ষরে কেন, দ্রুতলিখিত ভাবের মধ্যেও ধরা পড়ে। ছাপার অক্ষরে সেই ব্যক্তিগত সংস্রবটি নষ্ট হয়-- সে অবস্থায় এই সব লেখা বাতি-নেবা চীন লণ্ঠনের মতো হাল্কা ও ব্যর্থ হতে পারে। তাই জর্ম্মনিতে হাতের অক্ষর ছাপবার উপায় আছে খবর পেয়ে লেখনগুলি ছাপিয়ে নেওয়া গেল। অন্যমনস্কতায় কাটাকুটি ভুলচুক ঘটেছে। সে সব ত্রুটিতেও ব্যক্তিগত পরিচয়েরই আভাস রয়ে গেল॥ শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মৌমাছির মতো আমি চাহি না ভাণ্ডার ভরিবারে বসন্তেরে ব্যর্থ করিবারে। সে তো কভু পায় না সন্ধান কোথা আছে প্রভাতের পরিপূর্ণ দান। তাহার শ্রবণ ভরে আপন গুঞ্জনস্বরে, হারায় সে নিখিলের গান। জানে না ফুলের গন্ধে আছে কোন্ করুণ বিষাদ, সে জানে তা সংগ্রহের পথের সংবাদ। চাহে নি সে অরণ্যের পানে, লতার লাবণ্য নাহি জানে, পড়ে নি ফুলের বর্ণে বসন্তের মর্মবাণী লেখা। মধুকণা লক্ষ্য তার, তারি কক্ষ আছে শুধু শেখা। পাখির মতন মন শুধু উড়িবার সুখ চাহে উধাও উৎসাহে; আকাশের বক্ষ হতে ডানা ভরি তার স্বর্ণ-আলোকের মধু নিতে চায়, নাহি যার ভার, নাহি যার ক্ষয়, নাহি যার নিরুদ্ধ সঞ্চয়, যার বাধা নাই, যারে পাই তবু নাহি পাই-- যার তরে নহে লোভ, নহে ক্ষোভ, নহে তীক্ষ্ণ রিষ নহে শূল, নহে গুপ্ত বিষ।
ওগো মোর নাহি যে বাণী আকাশে হৃদয় শুধু বিছাতে জানি। আমি অমাবিভাবরী আলোকহারা মেলিয়া তারা চাহি নিঃশেষ পথপানে নিষ্ফল আশা নিয়ে প্রাণে। বহুদূরে বাজে তব বাঁশি, সকরুণ সুর আসে ভাসি বিহ্বল বায়ে নিদ্রাসমুদ্র পারায়ে। তোমারি সুরের প্রতিধ্বনি দিই যে ফিরায়ে-- সে কি তব স্বপ্নের তীরে ভাঁটার স্রোতের মতো লাগে ধীরে, অতি ধীরে ধীরে।