স্বপ্নে দেখি নৌকো আমার নদীর ঘাটে বাঁধা; নদী কিম্বা আকাশ সেটা লাগল মনে ধাঁধাঁ। এমন সময় হঠাৎ দেখি, দিক্সীমানায় গেছে ঠেকি একটুখানি ভেসে-ওঠা ত্রয়োদশীর চাঁদা। 'নৌকোতে তোর পার করে দে' এই ব'লে তার কাঁদা। আমি বলি, 'ভাবনা কী তায়, আকাশপারে নেব মিতায়-- কিন্তু আমি ঘুমিয়ে আছি এই যে বিষম বাধা, দেখছ আমার চতুর্দিকটা স্বপ্নজালে ফাঁদা।'
ভাগ্য যখন কৃপণ হয়ে আসে, বিশ্ব যবে নিঃস্ব তিলে তিলে, মিষ্ট মুখে ভুবন-ভরা হাসি ওষ্ঠে শেষে ওজন-দরে মিলে, বন্ধুজনে বন্ধ করে প্রাণ, দীর্ঘদিন সঙ্গীহীন একা, হঠাৎ পড়ে ঋণশোধেরই পালা, ঋণীজনের না যায় পাওয়া দেখা, তখন ঘরে বন্ধ হ রে কবি, খিলের পরে খিল লাগাও খিল। কথার সাথে গাঁথো কথার মালা, মিলের সাথে মিল মিলাও মিল। কপাল যদি আবার ফিরে যায়, প্রভাত-কালে হঠাৎ জাগরণে, শূন্য নদী আবার যদি ভরে শরৎ-মেঘে ত্বরিত বরিষনে, বন্ধু ফিরে বন্দী করে বুকে, সন্ধি করে অন্ধ অরিদল, অরুণ ঠোঁটে তরুণ ফোটে হাসি, কাজল চোখে করুণ আঁখিজল, তখন খাতা পোড়াও খ্যাপা কবি, দিলের সাথে দিল লাগাও দিল। বাহুর সাথে বাঁধো মৃণাল-বাহু, চোখের সাথে চোখে মিলাও মিল।
কেউ যে কারে চিনি নাকো সেটা মস্ত বাঁচন। তা না হলে নাচিয়ে দিত বিষম তুর্কি-নাচন। বুকের মধ্যে মনটা থাকে, মনের মধ্যে চিন্তা-- সেইখানেতেই নিজের ডিমে সদাই তিনি দিন তা। বাইরে যা পাই সম্জে নেব তারি আইন-কানুন, অন্তরেতে যা আছে তা অন্তর্যামীই জানুন। চাই নে রে, মন চাই নে। মুখের মধ্যে যেটুকু পাই যে হাসি আর যে কথাটাই যে কলা আর যে ছলনাই তাই নে রে মন, তাই নে। বাইরে থাকুক মধুর মূর্তি, সুধামুখের হাস্য, তরল চোখে সরল দৃষ্টি-- করব না তার ভাষ্য। বাহু যদি তেমন করে জড়ায় বাহুবন্ধ আমি দুটি চক্ষু মুদে রইব হয়ে অন্ধ-- কে যাবে ভাই, মনের মধ্যে মনের কথা ধরতে? কীটের খোঁজে কে দেবে হাত কেউটে সাপের গর্তে? চাই নে রে, মন চাই নে। মুখের মধ্যে যেটুকু পাই যে হাসি আর যে কথাটাই যে কলা আর যে ছলনাই তাই নে রে মন, তাই নে। মন নিয়ে কেউ বাঁচে নাকো, মন বলে যা পায় রে কোনো জন্মে মন সেটা নয় জানে না কেউ হায় রে। ওটা কেবল কথার কথা, মন কি কেহ চিনিস? আছে কারো আপন হাতে মন ব'লে এক জিনিস? চলেন তিনি গোপন চালে, স্বাধীন তাঁহার ইচ্ছে-- কেই বা তাঁরে দিচ্ছে এবং কেই বা তাঁরে নিচ্ছে! চাই নে রে, মন চাই নে। মুখের মধ্যে যেটুকু পাই যে হাসি আর যে কথাটাই যে কলা আর যে ছলনাই তাই নে রে মন, তাই নে।