আলোকে আসিয়া এরা লীলা করে যায়, আঁধারেতে চলে যায় বাহিরে। ভাবে মনে, বৃথা এই আসা আর যাওয়া, অর্থ কিছুই এর নাহি রে। কেন আসি, কেন হাসি, কেন আঁখিজলে ভাসি, কার কথা বলে যাই, কার গান গাহি রে-- অর্থ কিছুই তার নাহি রে। ওরে মন, আয় তুই সাজ ফেলে আয়, মিছে কী করিস নাট-বেদীতে। বুঝিতে চাহিস যদি বাহিরেতে আয়, খেলা ছেড়ে আয় খেলা দেখিতে। ওই দেখ্ নাটশালা পরিয়াছে দীপমালা, সকল রহস্য তুই চাস যদি ভেদিতে নিজে না ফিরিলে নাট-বেদীতে। নেমে এসে দূরে এসে দাঁড়াবি যখন-- দেখিবি কেবল, নাহি খুঁজিবি, এই হাসি-রোদনের মহানাটকের অর্থ তখন কিছু বুঝিবি। একের সহিত একে মিলাইয়া নিবি দেখে, বুঝে নিবি, বিধাতার সাথে নাহি যুঝিবি-- দেখিবি কেবল, নাহি খুঁজিবি।
কেবল তব মুখের পানে চাহিয়া, বাহির হনু তিমির-রাতে তরণীখানি বাহিয়া। অরুণ আজি উঠেছে-- আশোক আজি ফুটেছে-- না যদি উঠে,না যদি ফুটে, তবুও আমি চলিব ছুটে তোমার মুখে চাহিয়া। নয়নপাতে ডেকেছ মোরে নীরবে। হৃদয় মোর নিমেষ-মাঝে উঠেছে ভরি গরবে। শঙ্খ তব বাজিল-- সোনার তরী সাজিল-- না যদি বাজে, না যদি সাজে, গরব যদি টুটে গো লাজে চলিব তবু নীরবে। কথাটি আমি শুধাব নাকো তোমারে। দাঁড়াব নাকো ক্ষণেক-তরে দ্বিধার ভরে দুয়ারে। বাতাসে পাল ফুলিছে-- পতাকা আজি দুলিছে-- না যদি ফুলে, না যদি দুলে, তরণী যদি না লাগে কূলে শুধাব নাকো তোমারে।