পথ চেয়ে যে কেটে গেল কত দিনে রাতে। আজ ধুলার আসন ধন্য করে বসবে কি মোর সাথে। রচবে তোমার মুখের ছায়া চোখের জলে মধুর মায়া, নীরব হয়ে তোমার পানে চাইব গো জোড় হাতে। এরা সবাই কী বলে যে লাগে না মন আর, আমার হৃদয় ভেঙে দিল কী মাধুরীর ভার। বাহুর ঘেরে তুমি মোরে রাখবে না কি আড়াল করে, তোমার আঁখি চাইবে না কি আমার বেদনাতে।
কে আমার ভাষাহীন অন্তরে চিত্তের মেঘলোকে সন্তরে, বক্ষের কাছে থাকে তবুও সে রয় দূরে, থাকে অশ্রুত সুরে। ভাবি বসে, গাব আমি তারই গান-- চুপ করে থাকি সারা দিনমান, অকথিত আবেগের ব্যথা সই। মন বলে, কথা কই কথা কই! চঞ্চল শোণিতে যে সত্তার ক্রন্দন ধ্বনিতেছে অর্থ কী জানি তাহা, আদিতম আদিমের বাণী তাহা। ভেদ করি ঝঞ্ঝার আলোড়ন ছেদ করি বাষ্পের আবরণ চুম্বিল ধরাতল যে আলোক, স্বর্গের সে বালক কানে তার বলে গেছে যে কথাটি তারই স্মৃতি আজো ধরণীর মাটি দিকে দিকে বিকাশিছে ঘাসে ঘাসে-- তারই পানে চেয়ে চেয়ে সেই সুর কানে আসে। প্রাণের প্রথমতম কম্পন অশথের মজ্জায় করিতেছে বিচরণ, তারই সেই ঝংকার ধ্বনিহীন-- আকাশের বক্ষেতে কেঁপে ওঠে নিশিদিন; মোর শিরাতন্তুতে বাজে তাই; সুগভীর চেতনার মাঝে তাই নর্তন জেগে ওঠে অদৃশ্য ভঙ্গিতে অরণ্যমর্মর-সংগীতে। ওই তরু ওই লতা ওরা সবে মুখরিত কুসুমে ও পল্লবে-- সেই মহাবাণীময় গহনমৌনতলে নির্বাক স্থলে জলে শুনি আদি-ওংকার, শুনি মূক গুঞ্জন অগোচর চেতনার। ধরণীর ধূলি হতে তারার সীমার কাছে কথাহারা যে ভুবন ব্যাপিয়াছে তার মাঝে নিই স্থান, চেয়ে-থাকা দুই চোখে বাজে ধ্বনিহীন গান।