সম্পাদকি তাগিদ নিত্য চলছে বাহিরে, অন্তরেতে লেখার তাগিদ একটু নাহি রে মৌন মনের মধ্যে গদ্যে কিংবা পদ্যে। পূর্ব যুগে অশোক গাছে নারীর চরণ লেগে ফুল উঠিত জেগে-- কলিযুগে লেখনীরে সম্পাদকের তাড়া নিত্যই দেয় নাড়া, ধাক্কা খেয়ে যে জিনিসটা ফোটে খাতার পাতে তুলনা কি হয় কভু তার অশোকফুলের সাথে। দিনের পরে দিন কেটে যায় গুন্গুনিয়ে গেয়ে শীতের রৌদ্রে মাঠের পানে চেয়ে। ফিকে রঙের নীল আকাশে আতপ্ত সমীরে আমার ভাবের বাষ্প উঠে ভেসে বেড়ায় ধীরে, মনের কোণে রচে মেঘের স্তূপ, নাই কোনো তার রূপ-- মিলিয়ে যায় সে এলোমেলো নানান ভাবনাতে, মিলিয়ে যায় সে কুয়োর ধারে শজনেগুচ্ছ-সাথে। এদিকে যে লেখনী মোর একলা বিরহিণী; দৈবে যদি কবি হতেন তিনি, বিরহ তাঁর পদ্যে বানিয়ে নীচের লেখার ছাঁদে আমায় দিতেন জানিয়ে-- বিনয়সহ এই নিবেদন অঙ্গুলিচম্পাসু, নালিশ জানাই কবির কাছে, জবাবটা চাই আশু। যে লেখনী তোমার হাতের স্পর্শে জীবন লভে অচলকূটের নির্বাসন সে কেমন ক'রে সবে। বক্ষ আমার শুকিয়ে এল, বন্ধ মসী-পান, কেন আমায় ব্যর্থতার এই কঠিন শাস্তি দান। স্বাধিকারে প্রমত্তা কি ছিলাম কোনোদিন। করেছি কি চঞ্চু আমার ভোঁতা কিংবা ক্ষীণ। কোনোদিন কি অপঘাতে তাপে কিংবা চাপে অপরাধী হয়েছিলাম মসীপাতন-পাপে। পত্রপটে অক্ষর-রূপ নেবে তোমার ভাষা, দিনে-রাতে এই ছাড়া মোর আর কিছু নেই আশা। নীলকণ্ঠ হয়েছি যে তোমার সেবার তরে, নীল কালিমার তীব্ররসে কণ্ঠ আমার ভরে। চালাই তোমার কীর্তিপথে রেখার পরে রেখা, আমার নামটা কোনো খাতায় কোথাও রয় না লেখা। ভগীরথকে দেশবিদেশে নিয়েছে লোক চিনে, গোমুখী সে রইল নীরব খ্যাতিভাগের দিনে। কাগজ সেও তোমার হাতের স্বাক্ষরে হয় দামি, আমার কাজের পুরস্কারে কিছুই পাই নে আমি। কাগজ নিত্য শুয়ে কাটায় টেবিল-'পরে লুটি, বাঁ দিক থেকে ডান দিকেতে আমার ছুটোছুটি। কাগজ তোমার লেখা জমায়, বহে তোমার নাম-- আমার চলায় তোমার গতি এইটুকু মোর দাম। অকীর্তিত সেবার কাজে অঙ্গ হবে ক্ষীণ, আসবে তখন আবর্জনায় বিসর্জনের দিন। বাচালতায় তিন ভুবনে তুমিই নিরুপম, এ পত্র তার অনুকরণ; আমার তুমি ক্ষমো। নালিশ আমার শেষ করেছি, এখন তবে আসি। --তোমার কালিদাসী।