পুষ্প দিয়ে মার যারে চিনল না সে মরণকে। বাণ খেয়ে যে পড়ে, সে যে ধরে তোমার চরণকে। সবার নীচে ধুলার 'পরে ফেল যারে মৃত্যু-শরে সে যে তোমার কোলে পড়ে-- ভয় কী বা তার পড়নকে। আরামে যার আঘাত ঢাকা, কলঙ্ক যার সুগন্ধ, নয়ন মেলে দেখল না সে রুদ্র মুখের আনন্দ। মজল না সে চোখের জলে, পৌঁছল না চরণতলে, তিলে তিলে পলে পলে ম'ল যেজন পালঙ্কে।
তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে টুকরো ক'রে কাছি ডুবতে রাজি আছি আমি ডুবতে রাজি আছি। সকাল আমার গেল মিছে, বিকেল যে যায় তারি পিছে; রেখো না আর, বেঁধো না আর কূলের কাছাকাছি। মাঝির লাগি আছি জাগি সকল রাত্রিবেলা, ঢেউগুলো যে আমায় নিয়ে করে কেবল খেলা। ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার ভ্রূকুটিতে; দাও ছেড়ে দাও ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি।
শুধু অকারণ পুলকে ক্ষণিকের গান গা রে আজি প্রাণ ক্ষণিক দিনের আলোকে যারা আসে যায়, হাসে আর চায়, পশ্চাতে যারা ফিরে না তাকায়, নেচে ছুটে ধায়, কথা না শুধায়, ফুটে আর টুটে পলকে-- তাহাদেরি গান গা রে আজি প্রাণ ক্ষণিক দিনের আলোকে। প্রতি নিমেষের কাহিনী আজি বসে বসে গাঁথিস নে আর, বাঁধিস নে স্মৃতিবাহিনী। যা আসে আসুক, যা হবার হোক, যাহা চলে যায় মুছে যাক শোক, গেয়ে ধেয়ে যাক দ্যুলোক ভূলোক প্রতি পলকের রাগিণী। নিমেষে নিমেষ হয়ে যাক শেষ বহি নিমেষের কাহিনী। ফুরায় যা দে রে ফুরাতে। ছিন্ন মালার ভ্রষ্ট কুসুম ফিরে যাস নেকো কুড়াতে। বুঝি নাই যাহা চাই না বুঝিতে, জুটিল না যাহা চাই না খুঁজিতে, পুরিল না যাহা কে রবে যুঝিতে তারি গহ্বর পুরাতে। যখন যা পাস মিটায়ে নে আশ, ফুরাইলে দিস ফুরাতে। ওরে থাক্ থাক্ কাঁদনি! দুই হাত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দে রে নিজে হাতে বাঁধা বাঁধনি। যে সহজ তোর রয়েছে সমুখে আদরে তাহারে ডেকে নে রে বুকে, আজিকার মতো যাক যাক চুকে যত অসাধ্য-সাধনি। ক্ষণিক সুখের উৎসব আজি, ওরে থাক্ থাক্ কাঁদনি! শুধু অকারণ পুলকে নদীজলে-পড়া আলোর মতন ছুটে যা ঝলকে ঝলকে। ধরণীর 'পরে শিথিলবাঁধন ঝলমল প্রাণ করিস যাপন, ছুঁয়ে থেকে দুলে শিশির যেমন শিরীষ ফুলের অলকে। মর্মরতানে ভরে ওঠ্ গানে শুধু অকারণ পুলকে।